হোম > ছাপা সংস্করণ

চোখের সামনে তলিয়ে গেল ধান

জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ

সম্প্রতি উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীসহ জেলার ভেতরের সব নদীর পানি বেড়েছে। এতে করে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। গত রোববার রাত ১১টার দিকে দিরাই ও জগন্নাথপুর উপজেলার শেষ প্রান্তে অবস্থিত কামারখাল নদীতীরের হুরামান্দিয়া হাওরের ৪২ নম্বর ফসল রক্ষা বাঁধটিও পানির চাপে ধসে যায়। রাতের মধ্যেই তলিয়ে যায় হাওরের প্রায় ৪০০ হেক্টর জমির ধান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাওরের ওপরের অংশের জমিগুলোতে পানি ছুঁই ছুঁই অবস্থা। পরিশ্রমের ফসল বাঁচাতে দ্রুত ধান কাটতে দেখা গেছে কৃষকদের।

‘আমার ছেলেটায় চুক্তি কইরা অন্যের জমিতে চাষবাস করছিল। ২-৪ দিন পর ধান কাটবার কথা আছিল। আমার ছেলেটার স্বপ্ন পানিতে ভাসতাছে।’ ডুবে যাওয়া ধান নিয়ে এভাবেই বিলাপ করছিলেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের বরমা গ্রামের বাসিন্দা রুফিয়া আক্তার।

বাবাহারা দুই ছেলেকে নিয়ে অন্যের জমি চুক্তি করে হাওরে চাষাবাদ করছিলেন রুফিয়া। এর মধ্যে ঋণ তো আছেই। দুই কেয়ার জমিতে ২৯ জাতের ধান চাষ করেছিলেন তিনি। সব ভেসে গেছে বানের পানিতে।

রুফিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাহ্‌রির আগে কিছু ধান কেটেছিল ছেলে। সকালে আইসা দেখি পানি চলে আসছে। যে ধান কেটে রাখছিল, সেটাও পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।’

দিরাই উপজেলার হুরামান্দিয়া হাওরে বরমা গ্রামসহ আরও ১০টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার কৃষকের জমির ফসল রয়েছে। এখানে প্রায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছিল।

গতকাল সোমবার সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দেখা গেছে, ধীরে ধীরে চোখের সামনে হাওরের ফসল ডুবছে। ইচ্ছে থাকলেও কিছু করার ছিল না কৃষকদের। কারণ, এই পানিতে ধান কেটে তুলতে হলে নৌকার প্রয়োজন। কিন্তু সব কৃষক পরিবারের নৌকা নেই। তাই যে যেভাবে পারছেন, কোমরপানি পর্যন্ত গিয়ে ধান কেটে তীরে আনার চেষ্টা করছেন।

বরমা গ্রামের কৃষক শিপন মিয়া বলেন, ‘দেখতাছি হাওরে পানি ঢুকছে। আমার জমি একটু ওপরে, তাই সময় পাইছি। আমার জমিও দ্রুত ডুবে যাবে।’

একই গ্রামের কৃষক নুর আলী বলেন, ‘আমার ৬ কেয়ার জমির এক কাঁচি ধানও আনতে পারছি না। সব পানির নিচে।’ সরকারি সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার আর কিতা দেবে? যা দেবে তা আমরার পর্যন্ত পৌঁছায় না।’

রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের রায়বাঙ্গালী গ্রামের লোকজন প্রথমে খবর পান, হাওরের বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। পরে তাঁরা মাইকিং করে আশপাশের গ্রামের লোকজনকে জড়ো করে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেন। ঘণ্টাখানেক চেষ্টা করেন তাঁরা, কিন্তু বাঁধ আর টিকিয়ে রাখতে পারেননি—বলছিলেন রায়বাঙ্গালী গ্রামের বৃদ্ধ কৃষক সাদেক আলী।

কৃষি অফিস জানায়, হুরামান্দিয়া হাওরে ১ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছিল এবং ২০০ হেক্টর জমির মতো তলিয়ে গেছে। কিন্তু স্থানীয় কৃষকেরা তা মানতে নারাজ। কৃষকদের দাবি, বেশির ভাগ চাষি এবার ২৯ ধান চাষ করেছিলেন। ২৯ ধান পাকে দেরিতে, কাটাও হয় দেরিতে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম দাবি করে বলেন, ‘হাওরে ১ হাজার হেক্টরের মধ্যে ৮০০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। বাকি ২০০ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়েছে।’

ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, আমরা ইতিমধ্যে তাঁদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হবে।’

সুনামগঞ্জে এ বছর ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ঢলের পানিতে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর ফসল তলিয়ে গেছে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ