২০১৪ সালে মহাবিতর্কিত ‘তিন মোড়ল’ নীতি থেকে সরে এসে আইসিসি ২০১৭ সালে বাস্তবায়ন করেছিল নতুন এক অর্থনৈতিক মডেল। এই মডেলে ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সম্ভাব্য আয়ের ভাগ-বণ্টনে বেশ সাম্য আনে আইসিসি। আর এটি সহায়তা করে বাংলাদেশের মতো টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে নিচের দিকে থাকা পূর্ণ সদস্যকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী হতে।
২০১৫ থেকে সদস্য ভেদে বিভিন্ন অঙ্কে নিজেদের আয়ের ভাগ ও টেস্ট তহবিল দিচ্ছে আইসিসি। সাত বছরে আইসিসির লভ্যাংশ আর টেস্ট তহবিল থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) পেয়েছে ৫৫১ কোটি টাকা। এখন বিসিবির একটি বড় আয়ের উৎসই হয়ে দাঁড়িয়েছে আইসিসি থেকে পাওয়া এই টাকা। আরও নির্দিষ্ট করে বললে বিসিবির এক-তৃতীয়াংশ আয়ের জোগানদাতা আইসিসির টাকা, যেটি ক্রিকেট বোর্ড পায় কোন বিনিয়োগ ছাড়াই। টুর্নামেন্ট, সম্প্রচার, পৃষ্ঠপোষক, এফডিআরের সুদ ও অন্য যেকোনো খাত থেকে বিসিবিকে আয় করতে হয় অনেক কিছু বিনিয়োগ করে। আইসিসির বিপুল অঙ্কের টাকা তারা পায় শুধু টেস্ট খেলুড়ে দল বা পূর্ণ সদস্য হিসেবে।
একটা সময়ে বছরে পর্যাপ্ত টেস্ট না খেলার হাপিত্যেশ ছিল বাংলাদেশের। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের মতো নতুন প্রতিযোগিতা আসার পর এখন বাংলাদেশ হোম ও অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে বছরে গড়ে ১০টি টেস্ট খেলার সুযোগ পাচ্ছে। সামনে এটি আরও বাড়বে। কিন্তু আইসিসির এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বলার মতো নয়। প্রতিযোগিতার গত চক্রে বাংলাদেশ শেষ করেছিল পয়েন্ট তালিকায় শেষে থেকে। এবারও আছে তলানিতে। গত জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জিতে আশার পালে বড় হাওয়া দিলেও আবারও ধারাবাহিক ব্যর্থতার চোরাবালিতে আটকে যেতে সময় লাগেনি তাদের। এ বছর পরের সাত টেস্টের পাঁচটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। ব্যর্থতার এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সাকিবদের ধবলধোলাই।
লঙ্গার ভার্সনে আরও কী করা যায়, আলাপ হয়েছে। একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ তিনটা প্রস্তাব তৈরি করছে। সেটা আমাদের দিলে আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করব।
নাজমুল হাসান পাপন, সভাপতি, বিসিবি
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন গতকাল পরিচালনা পরিষদের সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে টেস্টে বাংলাদেশের সাফল্য-ব্যর্থতার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন। সেখানে জানিয়েছেন, ২০১২ সালের অক্টোবরে তিনি বিসিবির সভাপতি হওয়ার পর বাংলাদেশ ৬১ টেস্ট খেলে জিতেছে ১৩টিতে। এই ১০ বছরে জয়ের হার ২১ দশমিক ৩১ শতাংশ। তাঁর আগের ১২ বছরে টেস্টে বাংলাদেশের জয়ের হার ছিল ৪ দশমিক ১১ শতাংশ। পরিসংখ্যানের মাধ্যমে বিসিবির সভাপতি নিজেদের পারফরম্যান্সের ‘উন্নতি’ দাবি করেছেন। যদিও গত ১০ বছরে বাংলাদেশের ১৩ জয়ের ৭টিই এসেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ১৩ জয়ের ৯টি দেশের মাঠে।
‘টেস্ট ক্রিকেটের সংস্কৃতিটা আমাদের দেশে আগেও কখনো ছিল না, এখনো নেই’—সেন্ট লুসিয়া টেস্টের পর করা সাকিব আল হাসানের এই মন্তব্যের সঙ্গে পাপন দ্বিমত পোষণ করছেন না। তিনি বললেন, ‘একেবারে দ্বিমত পোষণ করি না। সামগ্রিকভাবে এই সংস্কৃতি আমাদের নেই। আগে খেলার সুযোগটা পেল কোথায়। এখন খেলা শুরু করেছে, আমরা বাইরে গিয়েও জেতা শুরু করেছি। তাই বলে কি সব জিতব নাকি!’