১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সকালেই পরিবারের সদস্যদের ঢাকায় রেখে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান চলে যান গ্রামের বাড়িতে। গ্রামের পরিস্থিতি বুঝে পরিবারের সদস্যদের গ্রামে নিয়ে যাবেন, তারপর সীমান্ত পার হয়ে চলে যাবেন ভারতে। কিন্তু পারিবারিক কারণে এই পরিকল্পনা বাতিল করে দেন তিনি। এপ্রিলে ফিরে আসেন ঢাকায়। স্ত্রী মিলি রহমানকে বলেন, ‘গ্রামে দুবার নিরীহ মানুষের ওপর বিমান হামলা হয়েছে। আমি পাইলট হয়েও তাদের কোনো কাজে লাগলাম না। আমি ভাবছিলাম, কীভাবে একটা প্লেন জোগাড় করা যায়। কেননা, বিমান প্রতিহত করতে হলে আরেকটা বিমান চাই।’
একদিন তিনি মিলি রহমানকে বললেন, ‘আমি মনস্থির করেছি, পশ্চিম পাকিস্তানেই ফিরে যাব। কিছু করলে পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়েই করতে হবে।’ মে মাসের ৯ তারিখে পশ্চিম পাকিস্তানে সপরিবারে যান তিনি। চাকরিতে কোনো অসুবিধা হলো না কিন্তু বাঙালি অফিসারদের ফ্লাইংয়ের অনুমতি থাকল না। মতিউর রহমান বাঙালি অফিসারদের সঙ্গে ম্যাপ খুলে পরীক্ষা করে দেখেন, কীভাবে বিমান নিয়ে কোন পথে উড়াল দেওয়া যায়।
একবার বড় মেয়ে মাহীন আর স্ত্রী মিলিকে নিয়ে উড়াল দেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন। ছোট মেয়ে তুহীন থাকবে বোনের কাছে। কিন্তু বিমানের কাছে গিয়ে মিলি রহমানের আপত্তিতে ফিরে আসেন।
২০ আগস্ট স্বাভাবিকভাবেই অফিসের উদ্দেশে রওনা দেন মতিউর রহমান। অন্যদিনের মতো সেদিন খোদা হাফেজও বলা হয়নি। দুপুরের দিকে পাঁচ-ছয়জন মিলিটারি পুলিশ অতর্কিতে এসে তাঁদের বাড়ি ঘিরে ফেলে। মিলি রহমান বুঝতে পারেন কিছু একটা হয়েছে। তিনি দ্রুত বঙ্গবন্ধুর ছবি, ম্যাপ, মতিউর রহমানের অন্যান্য কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলেন। ছাইগুলো বাথরুমে ফ্ল্যাশ করেন। তারপর অপেক্ষা করতে থাকেন।
রশিদ মিনহাজের বিমানে কীভাবে উঠলেন মতিউর রহমান, কীভাবে চেষ্টা করলেন সেই বিমানে করে মুক্তিযুদ্ধে যেতে, কীভাবে শহীদ হলেন, সে এক অন্য কাহিনি।
সূত্র: মিলি রহমান সম্পাদিত বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্মারকগ্রন্থ