হোম > ছাপা সংস্করণ

ফিলিস্তিন: জন্ম থেকে জ্বলছি

ফজলুল বারী

বাংলাদেশের অমর চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের একটি জনপ্রিয় ছবির নাম ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’। ‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো’ শিরোনামের জনপ্রিয় একটি গানও আছে ওই সিনেমায়। সেই থেকে বাংলাদেশের ট্রাকমালিকেরা তাঁদের ট্রাকের তেলের ট্যাংকারে রূপক অর্থে কথাটি ব্যবহার করেন—জন্ম থেকে জ্বলছি। ফিলিস্তিনিদের জীবনের সঙ্গে এর বড় মিল!

সর্বশেষ হামাসের ইসরায়েল আক্রমণ, জিম্মি করার ঘটনায় পশ্চিমা বিশ্বে ছি ছি রব উঠেছে! এই অপরাধটা যে মার্কিন নিয়ন্ত্রণাধীন পশ্চিমা বিশ্বের, তা কী আলাপ হয়? হিটলারের নাৎসি বাহিনীর হাতে ইহুদি গণহত্যার পর পশ্চিমা বিশ্ব ফিলিস্তিন জনপদে ইহুদিদের নিয়ে বসিয়েছে! সৃষ্টি করেছে ইসরায়েল রাষ্ট্রের।

সেই থেকে ফিলিস্তিনিরা নিজভূমে পরবাসী! পশ্চিমা মিডিয়ার কাছে তাদের নাম সন্ত্রাসী! সেই থেকে ফিলিস্তিনিরা দেশে দেশে শরণার্থী। জর্ডানের জনগোষ্ঠীর বড় অংশ এখন ফিলিস্তিনি। মিসর, লেবানন, সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যজুড়েই ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের বাস। বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মতো আরব বিশ্বের জনমানসে ফিলিস্তিনিদের নিয়ে এখন আর কোনো সহানুভূতি নেই। উম্মাহর রাজনীতির জন্য এটি একটি ভালো ইস্যু। বাস্তব ভিন্ন।

পশ্চিমা বিশ্ব ফিলিস্তিন টেরিটোরি নামে একটি কথিত রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেছে। এর নখদন্তহীন একজন প্রেসিডেন্টও আছেন! বাস্তবে ওই টেরিটোরির সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনে কেউ যেতে চাইলে ইসরায়েল থেকে ভিসা নিতে হবে। বাংলাদেশের কোনো সাংবাদিক জাতিসংঘের ব্যবস্থাপনা ছাড়া ফিলিস্তিনে যেতে পারবেন না। কারণ ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।

পশ্চিমা মিডিয়ার কাছে হামাস একটি জঙ্গি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী! কিন্তু হামাস ফিলিস্তিনিদের কাছে জনপ্রিয়। এদের তারা মুক্তিযোদ্ধা মনে করে। গাজায় হামাসের নির্বাচিত মেয়রসহ সিটি কর্তৃপক্ষ আছে। পশ্চিমা বিশ্বের যোগাযোগ চলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে।

ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হামাসের সম্পর্কও ভালো নয়। হামাস তাদের মনে করে পশ্চিমাদের দালাল।লেবাননের হিজবুল্লাহ সংগঠনটির সঙ্গে হামাসের সম্পর্ক ভালো। ইরান প্রভাবিত হিজবুল্লাহ ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে চলেছে। ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের সর্বশেষ বড় যুদ্ধ হয়। ইসরায়েলি বাহিনী বৈরুতের হিজবুল্লাহ নিয়ন্ত্রিত এলাকার বাড়িঘর সব ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। প্রতিটি সংঘাতের সঙ্গে জড়িত এমন ধ্বংস। দ্বন্দ্বের সঙ্গে জড়িত ভূমি দখল। ফিলিস্তিনিদের বসতি এলাকায় নতুন নতুন ইহুদি বসতি স্থাপন সব সময়েরই দ্বন্দ্বের উপজীব্য।

ফিলিস্তিনি শহরগুলোয় ছেলেমেয়েরা এমন দ্বন্দ্ব দেখে দেখেই বড় হয়। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে এরা পাথর ছুড়তে শেখে, গুলাল মারতে শেখে! একেকটি সংঘাতে যে এমন কত ফিলিস্তিনি ছেলেমেয়ে মারা যায়! পশ্চিমা মিডিয়া দেখে সন্ত্রাসী মরেছে। কত নতুন গৃহহীন সৃষ্টি হয় একেকটি সংঘাতে!

সর্বশেষ শনিবার হামাসের অভিযানে চমকে গেছে পশ্চিমা বিশ্ব। কারণ হামাসের হাতে ট্যাংক বা ইসরায়েলের মতো যুদ্ধাস্ত্র নেই। আছে শুধু রকেট লাঞ্চার! ইরানি ড্রোন ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করছে রাশিয়া। হামাসের তেমন ড্রোন ব্যবহারও শোনা যায়নি।স্বাধীনতাকামী একটি জনগোষ্ঠীর শক্তিই তাদের বড় শক্তি।

ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ককে বিশ্বের অন্যতম সেরা শক্তিশালী নেটওয়ার্ক মনে করা হয়। বাংলাদেশের গোয়েন্দারাও ব্যবহার করেন ইসরায়েলি প্রযুক্তি। এসব তাঁরা ইতালির একটি কোম্পানির মাধ্যমে কিনেছেন। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে জঙ্গি দল থেকে শুরু করে বিএনপি-জামায়াত সবার সব তৎপরতা গোয়েন্দাদের নখদর্পণে।

গাজার ফিলিস্তিনি এলাকাটি এমন প্রাচীরসহ গোয়েন্দা প্রযুক্তিতে নিয়ন্ত্রণ করা হয় যে মনুষ্যবিহীন অটোমেটিক মেশিনগানের সীমায় কেউ ঢুকলেই অবিরাম গুলি বেরোয়! সেই সতর্কতা এড়িয়ে হামাস এত বড় অভিযান চালিয়েছে। ইসরায়েলি মিডিয়া শনিবার থেকে এসব নিয়ে স্বদেশের গোয়েন্দা ব্যর্থতাকে ধুয়ে দিচ্ছে।

হামাস দাবি করেছে, তারা এমন সব গুরুত্বপূর্ণ ইসরায়েলি সেনাব্যক্তিত্ব, তাদের পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করেছে যে এর বিনিময়ে ইসরায়েলের জেলে আটক তাদের বন্দীদের মুক্ত করতে পারবে। এই একটি বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, শনিবারের অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্ত করা। অভিযানটি তাদের দীর্ঘদিনের প্রস্তুতির ফসল। কিন্তু এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকেই। এ যেন মরার আবার ভয় কী!

ইসরায়েল এর মাঝে প্রতিশোধ নিতে ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ শুরু করেছে। এতে করে কত হাজার ফিলিস্তিনি হতাহত হবেন, ধ্বংস হবে সব ফিলিস্তিনি বাড়িঘর, এসবের পরিসংখ্যান কেউ জানে না। জো বাইডেন থেকে শুরু করে সব পশ্চিমা নেতা একটাই কথা বলেছেন—ইসরায়েলিদের আত্মরক্ষার অধিকার আছে।

আত্মরক্ষার অধিকার ফিলিস্তিনিদের থাকতে নেই। কারণ তারা তো সন্ত্রাসী! সৌদি আরবের জন্য ঘটনাটি বিব্রতকর। কারণ তারা যখন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন শুরু করেছে, তখন ঘটনাটি ঘটল। আরব বিশ্বের বাকি নেতৃত্বও এখন চায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন। যদিও দেশগুলোর ভেতরের জনগোষ্ঠীর সমর্থন ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। আল আকসা মসজিদের কারণে ইসরায়েল বা পশ্চিমা বিশ্ব ফিলিস্তিনকে মুসলিমশূন্য করতে পারবে না।

লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী সাংবাদিক

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ