হোম > ছাপা সংস্করণ

সব ক্ষেত্রে যদি এমন অ্যাকশন হতো

মহিউদ্দিন খান মোহন

দেশজুড়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পুলিশের এডিসি হারুন অর রশিদ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের দুজন নেতাকে বেদম পিটিয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। ঘটনার কথা বোধকরি এখন আর জানতে কারও বাকি নেই। গণমাধ্যমগুলোতে সে কথা বিস্তারিতই এসেছে।

ঘটনার সূত্রপাত ইবরাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে। ৯ সেপ্টেম্বর রাতে একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি নিজেও এডিসি, গিয়েছিলেন সেখানে চিকিৎসার্থে। হাসপাতালের চারতলায় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ডিএমপির রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ। এ সময় ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তার স্বামী রাষ্ট্রপতির সহকারী একন্তি সচিব সেখানে এলে এডিসি হারুনের সঙ্গে তাঁর বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এ সময় রাষ্ট্রপতির এপিএস ফোন করে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকে সেখানে ডাকেন। তাঁরা আসার পরে এডিসি হারুন শাহবাগ থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে ছাত্রলীগের দুই নেতা ও রাষ্ট্রপতির এপিএসকে থানায় নিয়ে যায়।

অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ হাসপাতাল থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল শাখার সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাঈম এবং বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহম্মেদ মুনীমকে ধরে মারতে মারতে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় এবং সেখানে বেধড়ক মারধর করে তাঁদের গুরুতর আহত করা হয়। এডিসি হারুনসহ অন্তত ১০ জন পুলিশ সদস্য এতে অংশ নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নেতা গিয়ে তাঁদের দুজনকে এনে হাসপাতালে ভর্তি করা। শাহবাগ থানায় এডিসি হারুন এবং তাঁর সহকর্মীরা ছাত্রলীগের নেতাদের এতটাই নির্মম প্রহার করেন, একজনের কয়েকটি দাঁত ভেঙে যায়।

এ ঘটনার কথা দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয় সরকারের ওপরমহলে। ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের পাশাপাশি এক দিনের মধ্যে দুইবার বদলি করা হয় এডিসি হারুনকে। পরে তাঁকে করা হয় বরখাস্ত। এক দিন পরেই তাঁকে আবার রংপুর রেঞ্জের ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনা থেকে দুটি বিষয় প্রকটভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। এক. নৈতিক অবক্ষয়ের ব্যাধি পুলিশ বাহিনীতে ব্যাপকভাবেই সংক্রমিত হয়েছে। দুই. বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের পিটিয়ে পুলিশের পাকানো হাত এখন খোদ শাসক দলের কর্মীদেরও রেহাই দিচ্ছে না। এ যেন সেই ফ্রাংকেনস্টাইনের দানব।

নানা ঘটনায় এটা প্রমাণিত যে পুলিশ প্রশাসনের ভেতর কতিপয় সদস্যের মধ্যে অনৈতিকতা ভয়ংকরভাবে বাসা বেঁধেছে। এডিসি হারুন এবং নারী পুলিশ কর্মকর্তা সানজিদা আফরিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা একরকম ওপেন সিক্রেট ছিল বলে উল্লেখ করেছে একাধিক দৈনিক। ১৩ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সানজিদা আফরিন এডিসি হারুনের পক্ষ নিয়ে ঘটনার জন্য তাঁর স্বামীকে দায়ী করেছেন। একই দিনের বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এডিসি হারুনের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের কারণে দীর্ঘদিন ধরে কলহ চলছিল সানজিদা ও তাঁর স্বামী আজিজুল হকের মধ্যে। সমস্যা সমাধানের জন্য পারিবারিকভাবে কয়েক দফা চেষ্টা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়। ঘটনার দিন হারুন-সানজিদার অবস্থান জানতে পেরে আজিজুল হক উল্লিখিত ছাত্রনেতাদের সেখানে ডেকে নেন এবং এডিসি হারুনের ওপর চড়াও হন।

উল্লেখ্য, বছর দুয়েক আগে আমরা সামাজিক মাধ্যমে একজন বিতর্কিত চিত্রনায়িকার জন্মদিনে এক পুলিশ কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠভাবে কেক খাওয়ার ভিডিও ফুটেজ দেখেছি। অবশ্য ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল। কোনো শাস্তি হয়েছে কি না, কেউ জানে না। আলোচ্য ঘটনায় এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও এডিসি সানজিদা এখন পর্যন্ত অধরা। অনেকেই মনে করেন, ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য এডিসি সানজিদার বিরুদ্ধেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

এদিকে আজকের পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রশাসন ক্যাডারের চাপে শুধু এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব আজিজুল হকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাঁরা দাবি করছেন, এডিসি হারুনের পাশাপাশি আজিজুল এবং ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। রাষ্ট্রপতির এপিএস যদি এডিসি হারুনকে প্রহার এবং ছাত্রলীগ নেতাদের উসকে দিয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই অন্যায় করেছেন। তবে, এটা অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে, কখন কোন পরিস্থিতিতে তিনি উত্তেজিত হয়েছিলেন।

সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, ছাত্রলীগ না হয়ে যদি অন্য কোনো ছাত্রসংগঠনের নেতাদের পুলিশ এমন বর্বরোচিতভাবে পেটাত, তাহলে সেই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন ত্বরিত অ্যাকশন নেওয়া হতো কি না। কেননা, অতীতে পুলিশের অনেক সদস্যের এ ধরনের কর্মকাণ্ড আমরা দেখেছি। এমনকি জাতীয় সংসদের একজন সম্মানিত হুইপকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে রক্তাক্ত করলেও সেই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি; বরং ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়ে আজ তিনি উচ্চাসনে রয়েছেন।

খবরে বলা হয়েছে, এডিসি হারুন এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিরোধী দলের সমাবেশ-মিছিলে হামলা চালানো থেকে শুরু করে নানা ধরনের অঘটন ঘটিয়েছেন। পিটিয়ে জখম করেছেন মানুষকে। তাঁর বাড়াবাড়ির কারণে অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু কী আশ্চর্য! ওই সব ঘটনা ঘটানোর দায়ে এডিসি হারুনকে কখনো জবাবদিহি করতে হয়নি। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা তা দেখেও না দেখার ভান করেছেন। উপরন্তু পুলিশের পক্ষে এমন সব কথা বলা হয়েছে, যেন মিছিল-সমাবেশে হামলা এবং লাঠিপেটা করা পুলিশের কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু আজ যখন হাত পড়েছে নিজেদের গায়ে, তখনই তাদের অবস্থান বদলেছে।

শুনতে কটু লাগলেও এটা বলা বোধকরি অতিশয়োক্তি হবে না, বিরোধী নেতা-কর্মীদের পিটিয়ে হাত মকশো করে পুলিশের কেউ কেউ এখন বেপরোয়া। তাঁরা দেখেছেন, ক্ষমতার এ ধরনের অপব্যবহারে কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না; বরং ক্ষেত্রবিশেষে প্রশ্রয় এবং প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে বাহবা মেলে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের পেটালে যদি পুলিশকে জবাবদিহি করতে হতো, তাহলে আজ ছাত্রলীগের নেতারা একই ঘটনার শিকার হতেন না।

পাদটীকা: ঘটনা নিয়ে মহল্লার চায়ের দোকানের আড্ডায় একজন মন্তব্য করলেন—ছাত্রলীগ নেতাদের পেটানোয় এডিসির বিরুদ্ধে যে রকম ত্বরিতগতির অ্যাকশন হয়েছে, সব ক্ষেত্রে যদি এমন হতো, তাহলে দেশের চিত্রটাই বদলে যেত।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ