হোম > ছাপা সংস্করণ

এক শ্মশান ও ৫ নিথর দেহ

মন্টি বৈষ্ণব,সাংবাদিক

সময় তখন সকাল ১০টা। অফিসে টুকটাক কাজ করছি। হঠাৎ টেলিভিশনের স্ক্রলে দেখলাম কক্সবাজারের চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক পরিবারের চার ভাইয়ের মৃত্যু। স্ক্রলে এ সংবাদ দেখতে দেখতে কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলাম।

সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিলাম চকরিয়া প্রতিনিধিকে। ঘটনার কথা বলতে না বলতে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে যা শুনলাম, তা খুবই মর্মান্তিক। ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন চার ভাই। প্রতিনিধি ফোনে আশ্বাস দিলেন তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই নিউজ লিখে পাঠাবেন।

এক পরিবারের চারজনের মৃত্যু? এ কী করে সম্ভব? তা-ও আবার সড়ক দুর্ঘটনায়। এ তো শুধু চারটি সংখ্যা নয়, চারজন মানুষের মৃত্যু। মুহূর্তেই পৃথিবী থেকে চিরতরে না-ফেরার দেশে চলে গেলেন এক পরিবারের চারজন মানুষ।

ফোনে লাইন কাটার পর কিছুক্ষণ চুপচাপ ছিলাম। ভাবতে লাগলাম, আমরা এ কোন দেশে বসবাস করছি। যে দেশে ঘর থেকে বের হয়ে জীবিত অবস্থায় ঘরে ফিরতে পারব কি না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

মন খারাপকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। কারণ, আমরা গণমাধ্যমের কর্মী। তাই মনকে শক্ত করে সংবাদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

অতঃপর সংবাদ এল ‘বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ ভাইয়ের মৃত্যু’।

ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট এলাকার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে। বাবার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে পূজা করে বাড়ি ফেরার পথে পিকআপের ধাক্কায় মারা যান চার ভাই।

দুঃখের বিষয় ছিল, যাঁরা মারা গেছেন তাঁরা সেখানে গিয়েছিলেন ১০ দিন আগে প্রয়াত বাবার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। কিন্তু বাড়ি ফিরলেন নিথর দেহে। পরিবারের জন্য এই সংবাদ অত্যন্ত কষ্টের। যেখানে ১০ দিনের ব্যবধানে মারা গেলেন এক পরিবারের পাঁচজন সদস্য। এ ঘটনায় পরিবারসহ পুরো গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। গ্রামের মানুষ এক পরিবারের এত মানুষের মৃত্যু এর আগে কখনো দেখেননি। বুকফাটা কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে মৃত পরিবারের বাড়ির আঙিনা।

ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস। যেখানে ১০ মিনিট আগে সাত ভাইবোন একসঙ্গে ছিলেন, সেখানে পিকআপের চাপায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল ভাইবোনের বন্ধন। ভাগ্যক্রমে আহত অবস্থায় বেঁচে যান দুই ভাই আর এক বোন। কিন্তু চার ভাইয়ের শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে না হতেই হাসপাতালে দুপুরে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে মারা যান আরেক ভাই।

১০টা দিনের মাথায় এক পরিবারের ছয়জন মানুষ একেবারেই নাই হয়ে গেল? এক শ্মশানে আলাদা চিতায় জ্বলবে পাঁচ সন্তানের নিথর দেহ। কীভাবে মনকে সান্ত্বনা দেবেন পাঁচ সন্তানের মা? তিনি কী নিয়ে বেঁচে থাকবেন? স্বামী মারা যাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে হারিয়ে ফেললেন আদরের পাঁচ সন্তানকে। এই দুঃখের ভার কোন কাঁধে তিনি বহন করবেন? একসঙ্গে মুছে যাবে পাঁচ সন্তানের পুত্রবধূর সিঁথির সিঁদুর। কী নিয়ে বাঁচবেন তাঁরা?

খুব স্বভাবতই পরিবারের কেউ একজন মারা গেলে পরিবারের অন্য সদস্যরা একজন আরেকজনকে সান্ত্বনা দেন। কিন্তু এখানে কে কাকে সান্ত্বনা দেবেন? যে বাড়ির উঠানে শামিয়ানা টাঙানো হয়েছিল বাবার শ্রাদ্ধের জন্য, সেই শামিয়ানার নিচে নিথর দেহে পড়ে আছেন সন্তানেরা। এ সময় কে বা কার মনকে সান্ত্বনা দেবেন? এক বাড়িতে সারি সারি নিথর দেহ দেখে স্তব্ধ পুরো গ্রাম।

বাবার শ্রাদ্ধের আগের দিন মারা গেলেন পাঁচ ভাই। আর মারা যাওয়ার ১০ দিন পর একসঙ্গে পাঁচজনের শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা করবে এই পরিবার। যাঁরা বেঁচে থেকে এই শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান করবেন, তাঁরা শোক সইবার শক্তি অর্জন করুক।

সড়কে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এ মিছিলের গতি কোনোভাবেই থামছে না। এক একটা মৃত্যুতে থমকে যাচ্ছে এক একটা পরিবারের স্বপ্ন। থামুক সড়কপথে মৃত্যুর মিছিল। শূন্য না হোক আর কোনো মায়ের কোল।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ