লক্ষ্মীপুরে ফেরদৌসী মজুমদারের বাপের বাড়ি। সেখানে যাওয়া হয়নি কোনো দিন। ফেরদৌসীর বাবা ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তাই বাড়ির নাম ‘ডিপটি বাড়ি’।১৯৯৭ সালে লক্ষ্মীপুরে থিয়েটারের ক্লাস নিতে গেছেন ফেরদৌসী মজুমদার। তখনই প্রথম বাপের ভিটা দর্শন হলো। বাড়িটি ছিল সোমপাড়া, গোপাইরবাগে।
ফেরদৌসী মজুমদার তাঁর দুই ঘণ্টার ক্লাস নিয়েছেন। এবার ক্লাস নেবেন রামেন্দু মজুমদার। রামেন্দু মজুমদারই বললেন, ‘যাও, বাপের ভিটা থেকে ঘুরে এসো।’ সেখানে ছিলেন ফেরদৌসীর চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে হাসিনা। তিনি এসেছিলেন তাঁর এগারো বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে। তাঁরই সঙ্গে লক্ষ্মীপুর থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরের গ্রামের বাড়ির পথে চললেন ফেরদৌসী।
একটা জায়গায় যাওয়ার পর গাড়ি আর সামনে এগোয় না। কাঁচা পথটুকু হেঁটেই পাড়ি দিতে হবে। হাসিনা তাঁর মেয়েকে বললেন, ‘যাও, তুমি দৌড়াইয়া গিয়া তোমার নানুরে খবর দাও—বলো, দেখেন কে আসছে।’
নানু (মানে ফেরদৌসীর চাচাতো ভাইয়ের বউ) এসে জড়িয়ে ধরলেন ফেরদৌসীকে। তাঁর একেবারে আকর্ণবিস্তৃত হাসি। কচি কলাপাতা রঙের শাড়ি তাঁর পরনে। বাড়িতে ঢুকতেই পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুরো পাড়া যেন ভেঙে পড়ল বাড়িতে। সবাই এক নজর দেখতে চায় ফেরদৌসীকে।
ফেরদৌসীর আরেক চাচাতো ভাই বসু ভাইকে খবর পাঠানো হলো। তিনি তখন মসজিদে। ফেরদৌসী এসেছে শুনে সাদা দাঁড়ি সাদা চুলের এই থুড়থুড়ে বুড়ো পড়ি কি মরি বলে লাঠিতে ভর দিয়ে দৌড়ে এলেন। এসেই ফেরদৌসীকে বুকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে হাউ হাউ করে কেঁদে বলতে লাগলেন, ‘এইডা কি স্বপ্ন না হাছা? আঁই বোধ হয় তোঁয়ারে দেখনের লাই বাঁচি রইছি।’
এ সময় গ্লাসে করে শরবত বা ঘোলজাতীয় কী এক পানীয় এল। ফেরদৌসীর খেতে ইচ্ছে করল না। কিন্তু হঠাৎ নাকে ঘন দুধের সরের পরিচিত গন্ধটা আসতেই তিনি বললেন, ‘খাব। দ্যান।’
ছোটবেলায় দুধ জ্বাল দিলে এই গন্ধটা পাওয়া যেত। এ যেন অমৃত!
সূত্র: ফেরদৌসী মজুমদার, মনে পড়ে, পৃষ্ঠা ৩৭-৩৯