যশোরের অভয়নগর উপজেলায় একসময় মৃৎশিল্পের অনেক কদর ছিল। প্রযুক্তির ছোঁয়া এবং নানা প্রতিকূলতায় ঐতিহ্যবাহী চলিশিয়া পালবাড়ির মৃৎশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। তবু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা এ পেশার সঙ্গে জড়িত কুমারদের।
উপার্জন কমে যাওয়ায় কেউ কেউ এ পেশা ছেড়ে দিলেও অনেকে আঁকড়ে আছেন বাপ-দাদার পেশা। যদিও কপালে চিন্তার ভাঁজ নিয়েই চলছে তাঁদের মৃৎশিল্প তৈরির কাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় অভয়নগরে চলিশিয়ার পালবাড়িসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মৃৎশিল্প তৈরি হতো। মৃৎশিল্পীরা সুনিপুণভাবে মাটির পুতুল, হাঁড়ি, পাতিল, বাসন-কোসন, ঢাকনা, কলসি, শিশুদের খেলনাসামগ্রী, পেয়ালাসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করতেন। তাঁদের তৈরি পুতুল যশোর জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হতো। বর্তমানে নানা প্রতিকূলতায় ও অভাব অনাটনের কারণে মৃৎশিল্পীরা তাঁদের ঐতিহ্যবাহী বাপ-দাদার আদি পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
চালিশিয়া গ্রামের পালবাড়ি ঘুরে কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দুই শতাধিক পরিবার রয়েছে এখানে। পাড়ার সবাই সনাতন ধর্মাবলম্বী। অর্চনা পাল, শামিত্রি পাল, ববিতা পাল প্রতিমা এবং ছোট ছোট হাঁড়ি তৈরি করছেন। তাঁদের শিক্ষা ও জীবনযাত্রার মান অনুন্নত। এখন মাত্র কয়েকটি পরিবারের কারিগরেরা তাঁদের বাপ-দাদার আদি পেশা কোনোমতে আঁকড়ে ধরে আছেন। এসব মৃতশিল্পীর পেশার দৈন্যদশার সঙ্গে সঙ্গে সংসার জীবনে বিরাট বিপর্যয় নেমে এসেছে। মাটির তৈরি তৈজসপত্রের স্থান দখল করে নিয়েছে অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র। অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র দাম বেশি হলেও অধিক টেকসই হয়। তাই কদর কমেছে মাটির পাত্রের।
চলিশিয়ার অর্চনা পাল বলেন, ‘আমরা মাটি দিয়ে যে জিনিস বানাই সেগুলো আর আগের মতো বেচতে পারি না। কি করব, আর অন্য কাজও তেমন জানা নেই। তাই বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে ধরেই আছি। এখন আমাদের অবস্থা খুব খারাপ। দেখার কেউ নেই। তবে সরকার যদি একটু সহায়তা করত আমাদের, তাহলে ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম।’
মৃৎশিল্পের কারিগর বিষ্ণুপাল বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি তৈজসপত্রের দাম কম থাকায় এ শিল্প এখন ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। এই শিল্প রক্ষার জন্য সরকারি, বেসরকারি সব মহল যদি একটু সহযোগিতার হাত বাড়াতো, তাহলে আমাদের দুর্দিন থাকত না।’
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেজবাহ উদ্দীন বলেন, ‘মৃৎশিল্পের বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য সহায়তা চান, তাহলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।’