কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে হঠাৎ একটা ফোন এল, ‘হ্যালো, সাইমন?’
-সাইমন বলছি।
-লন্ডন থেকে বলছি। যত দ্রুত সম্ভব নমপেন থেকে ঢাকার দিকে যাও। ঢাকায় কিছু একটা ঘটতে চলেছে।
একাত্তরের মার্চ মাসের শুরুতেই দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফের প্রতিবেদক সাইমন ড্রিং লন্ডনে পত্রিকাটির সদর দপ্তর থেকে ফোনটি পেয়েছিলেন। ১ মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে দিয়েছিলেন। ঢাকা সেদিন পরিণত হয়েছিল মিছিলের শহরে। সেই উষ্ণতার পরশ ছড়িয়ে গিয়েছিল গোটা বাংলায়।
সাইমন ঢাকায় পৌঁছেছিলেন ৬ মার্চ। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে গিয়ে অনুভব করলেন শেখ মুজিবুর রহমানের ক্যারিশমা। পাকিস্তানের রাজনীতি আর পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সম্পর্কে গভীরভাবে জানার চেষ্টা করেন। সখ্য গড়ে ওঠে শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে।
এক সপ্তাহের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন সাইমন। কিন্তু তাঁর সাংবাদিকের নাক এরই মধ্যে খবরের ঘ্রাণ পাচ্ছিল। তাই তিনি থেকে গেলেন এখানে। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে লিখতে থাকলেন একের পর এক প্রতিবেদন। তা ছাপা হতে লাগল দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায়।
অন্য অনেক সাংবাদিকের মতো সাইমন ড্রিং উঠেছিলেন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইট, অর্থাৎ নির্বিচারে মানুষ হত্যা শুরু হয় যখন, তখন তিনি ছিলেন হোটেলেই। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বিদেশি সাংবাদিকদের সেখানেই অবরুদ্ধ করে রাখে, যেন তাঁরা এই বীভৎসতার খবর বাইরে প্রকাশ করতে না পারেন। পরদিন সবাইকে জোর করে তুলে দেওয়া হয় বিমানে।
সাইমন কিন্তু লুকিয়ে রইলেন হোটেলেই। হোটেলের কর্মচারীদের সহযোগিতায় ছোট্ট একটি মোটরগাড়িতে করে ঘুরে দেখলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পুরান ঢাকা। তারপর লিখলেন তাঁর সেই অতি বিখ্যাত প্রতিবেদন, ‘ট্যাংকস ক্র্যাশ রিভল্ট ইন পাকিস্তান’। গণহত্যার মর্মন্তুদ ঘটনা সেই প্রথম জানতে পারল বাইরের পৃথিবী। এর পরপরই সাইমন ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন।
সূত্র: বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম