সিনেমাজগতে শুরুতে একসময় উত্তমকুমারকে কোনো পরিচালকই পাত্তা দিতেন না। বহু অপমান সহ্য করেছেন উত্তম। এরপর যখন একটু একটু করে তাঁর অভিনয় দর্শক মন অধিকার করল, তখন তিনি চলচ্চিত্র মহলে পেলেন আলাদা খাতির। উত্তম সেই খাতিরটা বলবৎ রাখতে চাইলেন না।
সিনেমাকে যৌথ শিল্প বলা হলেও চলচ্চিত্রের কলাকুশলীদের মধ্যে শ্রেণিবিভাজন আছে। যাঁরা ছোট কাজ করেন, তাঁদের আপ্যায়নের ব্যবস্থাও ছোট। উত্তম জানতেন, তাঁরা অপমানের বোঝা মাথায় নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হন। সিনেমাজগতের সাহেব বিবি গোলামের মধ্যে তাঁরা শুধুই গোলাম। নামকরা শিল্পীদের জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজন থাকে। অল্প দামি শিল্পী আর নিম্নস্তরের কলাকুশলীদের জন্য প্লেটের পরিবর্তে শালপাতায় আহার।
উত্তমের মনে পড়ল, তিনিও একদিন ছিলেন শালপাতার দলে। তখন মাথা নিচু করে শালপাতাতেই খেতেন তিনি। একদিন দেখলেন, তিনি রাতারাতি জাতে উঠে গেছেন। বন্ধু অনিল মুখার্জির ইচ্ছে ছিল সিনেমায় অভিনয় করবেন। তখনো অভিনয়ে সেভাবে আসেননি তিনি। উত্তমের একেবারে জানি-দোস্ত অনিল। সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করছিলেন। একদিন যে ছবিতে উত্তম কাজ করছেন, সে ছবিতেই ছোট এক ভূমিকায় অভিনয় করছিলেন অনিল। অনিলকে উত্তম বললেন, ‘চল, আজ আমরা একসঙ্গে খাব।’
অনিলের মনে সংকোচ। কিন্তু উত্তম বন্ধুকে ছাড়বেন কেন? খাবার এল। উত্তমের জন্য প্লেটে সাজানো ভালো খাবার আর অনিলের জন্য শালপাতায় অতি সাধারণ খাবার।
উত্তমের ভেতরটা রাগে ফুঁসতে লাগল। তিনি রাগ সংযত করে নিজের প্লেটটা সরিয়ে রাখলেন। খবর রটে গেল। দৌড়ে এলেন প্রযোজক। উত্তম রাগতস্বরে বললেন, ‘সবাইকে যদি সমান সম্মান দিতে না পারেন, তাহলে এ খাবার আমি খাব না। আর কোনো দিন আমার জন্য স্পেশাল খাবারের ব্যবস্থা করে এঁদের অপমান করার চেষ্টা করবেন না।’
উপস্থিত সবাই উত্তমের কথা মেনে নিলেন। আর ধীরে ধীরে সেই বাজে প্রথার অবসান হলো।
সূত্র: উত্তমকুমার, আমার আমি, পৃষ্ঠা ১২২-১২৩