মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় মাঠের পর মাঠ সরিষার হলুদ ফুলে ভরে উঠেছে। সঙ্গে কালিজিরার ফুল। আর এ ফুলে ফুলে গুনগুনিয়ে ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করছে মৌমাছি। অপর দিকে দূর-দূরান্ত থেকে আসা চাষিরা উপজেলার দত্তপাড়া, নিলখী, দ্বিতীয়াখণ্ড, বহেরাতলা ও সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ফসলের খেতে বাক্স পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহ করছেন।
প্রতি সপ্তাহে আকার ভেদে প্রতি বাক্স থেকে গড়ে ২০ কেজি মধু সংগ্রহ করছেন তাঁরা। আর সরিষা ফুলের এ মধু কেজি প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এতে একদিকে মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা, অন্যদিকে খেতে মধু চাষ করায় ফলনও বাড়ছে।
জানা গেছে, চাষিরা সরিষাখেতের পাশে খোলা জায়গায় বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ছয় থেকে সাতটি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। আর এ চাক থেকেই মধু সংগ্রহ করেন মধুচাষিরা। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মৌচাষিরা এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। মৌ চাষের মাধ্যমে চাষিরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে দূর হচ্ছে বেকারত্বও।
মৌচাষি মো. কোহিনুর বলেন, ‘উপজেলার দ্বিতীয়াখণ্ড এলাকার সরিষাখেতে ২৫০টি বাক্স রাখা হয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব বাক্স থেকে প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় সাড়ে সাত-আট মণ মধু পাওয়া যায়। খেতে বেশি ফুল থাকায় পর্যাপ্ত মধু সংগ্রহ করা যাচ্ছে।’ তিনি আরও জানান, আকার ভেদে একেকটি বাক্সে ২০ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়। এখানে মৌ চাষের বিশেষ বাক্স কলনি রয়েছে ৩০০টি। প্রতিটি কলনিতে খরচ হয় আট থেকে ১০ হাজার টাকা। আর প্রতি কেজি মধু বিক্রি করা হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়।
শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনুপম রায় বলেন, ‘সরিষাখেতের পাশে মৌমাছির চাষ হলে সরিষার ফলন ১০ ভাগ বেড়ে যায়। তাই সরিষার ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ২৫০ হেক্টর। বাক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে এসব সরিষা ফুল থেকে উপজেলায় ২ হাজার ৬৩৬টি মৌ বাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে মৌমাছি ব্যবসায়ী যেমন একদিকে মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে খেতে মধু চাষ করায় ফলনও বাড়ছে।’