ভারত সরকারের দেওয়া পদ্মশ্রী প্রত্যাখ্যান করে আলোচনায় এসেছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বালিকা বয়স থেকে গানের সঙ্গেই সখ্য তাঁর। নব্বই পার হয়েছেন। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে যা জমেছে, তা জীবন্ত কিংবদন্তি হওয়ার জন্য যথেষ্ট। সেই মানুষটিকে কিনা ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব দিতে চাইছিল সরকার!
প্রত্যাখ্যান করে এ কথাও জানিয়ে দিয়েছেন গীতশ্রী সন্ধ্যা, ‘এ সম্মাননা তরুণ শিল্পীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।’ তাঁর এ কথায় প্রচ্ছন্ন ছিল, ‘গুণীর কদর করতে না পারলে কোরো না, ভণিতা করার দরকার নেই।’
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কাছে তরুণ শিল্পীরা যখনই গেছেন, তখনই পেয়েছেন মায়ের স্নেহ। ব্যবহারে সব সময় একটা যত্নের ছাপ। সন্ধ্যার আতিথেয়তার কথা তো সর্বজনবিদিত। আর সিনেমার গান? উত্তম-সুচিত্রা জুটির কত গানই যে হেমন্ত-সন্ধ্যার সৃষ্টি, সে কথা তো বলে শেষ করা যাবে না। আমরা শুধু ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ গানটার কথাই উল্লেখ করলাম।
করোনা শুরু হলে ফোন করে শিল্পীদের খবর নেন। রূপঙ্কর জানাচ্ছেন, লকডাউনের সময় ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সন্ধ্যা। জিজ্ঞেস করেছেন, ঠিকভাবে মাস্ক পরা হচ্ছে কি না, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা হচ্ছে কি না। শুধু রূপঙ্করকেই ফোন করে খোঁজখবর নিয়েছেন, তা নয়। তরুণ প্রজন্মের অনেক শিল্পীই তাঁর কাছ থেকে ফোন পেয়েছেন।
বিভিন্ন শিল্পীকে নানা পরামর্শও দিয়েছেন উদারভাবে। যেমন শ্রীকান্ত আচার্যকে বলেছেন, ‘অ্যাই শোনো, একদম চোখ বুজে গান করবে না তো। চোখ খুলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গান প্র্যাকটিস করবে। আর বেশি কথা বলবে না। জোরে তো নয়ই। চিৎকার-চেঁচামেচি কখনোই না, বুঝলে? ফোনেও বেশি কথা নয়। রেকর্ডিংয়ের দিন কোনো ফোন নয়।’
আর একটি কথা তিনি বলেছিলেন শ্রীকান্ত আচার্যকে। বলেছিলেন, ‘শোনো, পারতপক্ষে অন্যের গানের বিচারক হয়ো না।’
কথাটা যে কতটা ভারী, তা শ্রীকান্ত বোঝেন, তাই এই উপদেশ অন্ধের মতো মেনে চলেন।
সূত্র: এইসময়, ৫ অক্টোবর, ২০২১, আনন্দবাজার পত্রিকা১১ মার্চ, ২০১৭