হোম > ছাপা সংস্করণ

দেশে ৫০ হাজার বিদেশি অবৈধ

রাশেদ নিজাম, ঢাকা

ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও অন্তত ৫০ হাজার বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। পর্যটন, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজসহ বিভিন্ন ভিসায় তাঁরা এ দেশে এসেছেন। ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধ হয়ে পড়া বিদেশিদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ জোরালো করেছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি), গোয়েন্দা সংস্থা এবং ইমিগ্রেশন বিভাগের সূত্রে জানা যায়, দেশে এখন ১ লাখ ৬০ থেকে ৭০ হাজার বিদেশি নাগরিক অবস্থান করছেন। প্রতিদিন যাওয়া-আসার মধ্যে থাকেন তিন থেকে চার হাজার বিদেশি। অবৈধ হয়ে পড়া বিদেশির সংখ্যা অন্তত ৫০ হাজার।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, দেশে অবৈধভাবে অবস্থান করা বিদেশিদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রায়ই তাঁদের চিহ্নিত করে নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। প্রকৃত বিনিয়োগকারী এবং ভিসার শর্ত মেনে যাঁরা অবস্থান করছেন, তাঁদের কোনো অসুবিধা যেন না হয়, সেটিও দেখা হচ্ছে। তবে যাঁরা মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ভিসার শর্ত না মেনে অবস্থান করে নানা অপরাধে জড়াচ্ছেন, টাকা পাচার করছেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের চলতি মাসের একটি চিঠি থেকে জানা যায়, গত তিন বছরে এ থ্রি শ্রেণির ভিসায় বাংলাদেশে এসেছেন ৩৩ হাজার ৮৬৭ জন। এই ভিসা মূলত সরকারের সঙ্গে উন্নয়ন-সহযোগী সংস্থার চুক্তির আওতায় বিভিন্ন প্রকল্পে নানা পদে দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প; রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প; পায়রা, খুলনা, বরিশাল, মাতারবাড়ী, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম পাওয়ার প্ল্যান্ট; রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র; ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা প্রকল্প; গাজীপুর বিআরটিএসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে ২০২০ সালে ৯ হাজার ১৬৫ জন, ২০২১ সালে ১২ হাজার ৬০৭ জন এবং গত বছর ১২ হাজার ৯৫ জনকে ভিসা দেয় বাংলাদেশ। গোয়েন্দা সংস্থা এবং ইমিগ্রেশন থেকে জানা গেছে, এই ৩৩ হাজার ৮৬৭ বিদেশি নাগরিকের মধ্যে অর্ধেকের মতো কাজ করছেন। বাকিরা অবৈধভাবে অবস্থান করছেন।

বেপজা ও বিডা থেকে ছয়টি ক্যাটাগরিতে বিদেশি নাগরিকদের ভিসা-সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বি ভিসা, বিনিয়োগের জন্য পিআই (প্রাইভেট ইনভেস্টর) ভিসা, তাঁদের পরিবারের জন্য এফপিআই ভিসা, চাকরির জন্য ই (এমপ্লয়মেন্ট) ভিসা, তাঁদের পরিবারের জন্য এফ ই ভিসা এবং যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার সরবরাহ ও স্থাপন, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির জন্য ই আই ভিসা। এ ছাড়া এ থ্রি এবং পর্যটন ভিসা রয়েছে।

ইমিগ্রেশন থেকে জানা যায়, পর্যটন ভিসায় আসা বড় অংশই অবৈধভাবে থেকে যায়। অবৈধভাবে অবস্থান করা বিদেশিদের আরেকটি বড় অংশ আসে পিআই এবং এ থ্রি ভিসায়। নিয়ম অনুযায়ী মাত্র ৫০ হাজার ডলার বাংলাদেশে পাঠালেই পিআই ভিসা পাওয়া যায়। একজনের জন্য এই অঙ্ক প্রযোজ্য হলেও ভিসা নেন চার থেকে পাঁচজন। এরপর বাংলাদেশে এসে নানা ব্যবসা খুলে বসেন তাঁরা। রাজধানীর উত্তরা, গুলশান ও বারিধারায় চীনের কয়েকজন নাগরিকের এমন দোকান ও ব্যবসার খোঁজ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তাঁরা সরকারকে কোনো ভ্যাট কিংবা ট্যাক্স দেন না। আয়ের বড় অংশই উই চ্যাটের মাধ্যমে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেন।

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) নির্ভরযোগ্য সূত্র বলেছে, বাংলাদেশে চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে মূলত চীন, কোরিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে লোক আসছেন। তাঁরা একটি প্রকল্পের ২০০ থেকে ৩০০ লোকের নামে ভিসা আবেদন করেন। কিন্তু ওই সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানা যায়, তাদের চাহিদা ৪০ থেকে ৫০ জনের। বাকিরা সবাই এসে অন্য ধরনের কাজ করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভিসার মেয়াদ শেষেও অবৈধভাবে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরাতে উদ্যোগ জোরালো করেছে সরকার। ২০২০ ও ২০২১ সালে ২ হাজার ১৬৭ বিদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেও ১১ দেশের ১৩৭ জনকে ফেরত পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়, এসবি এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সূত্র জানায়, তাঁরা বিভিন্ন অবৈধ কাজে জড়িয়েছেন, ভিসা নীতিমালা লঙ্ঘন করে কাজ করেছেন, ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং ভিসার মেয়াদ শেষেও অবস্থান করছিলেন।

২০২১ সালে ৫২টি দেশের ৮৪৪ জন এবং ২০২২ সালে ৬১টি দেশের ১ হাজার ৩২৩ জনকে ফেরত পাঠানো হয়। তাঁদের মধ্যে পাঁচটি দেশের নাগরিকের সংখ্যা বেশি। দেশগুলো হচ্ছে চীন, সোমালিয়া, নাইজেরিয়া, ভারত ও শ্রীলঙ্কা। 

সেফ হোমের স্থান নির্ধারিত হয়নি
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, অবৈধ বিদেশিদের ফেরত পাঠানোর আগে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখতে ২০১৮ সালে রিটার্নিং হাউস বা সেফ হোম করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে এখনো এর জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়নি। বিমানবন্দর কাছে হওয়ায় উত্তরা এলাকায় সেফ হোম করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে আবদুল্লাহপুরে পুলিশ কারনেশন ভবনে করার পরিকল্পনা থাকলেও পরে অন্যত্র করার প্রস্তাব আসে।

বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ রিটার্নিং হাউস করার বিষয়টিও মাথায় আছে প্রশাসনের। একসঙ্গে বেশি লোক রাখলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তাই সেখানে সর্বোচ্চ ৫০ জনের থাকার ব্যবস্থা রাখা হবে।

ব্র‍্যাকের অভিবাসন শাখার প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, বিদেশিদের যে পরিমাণ ফেরত পাঠানো হচ্ছে, বছরে তার চেয়ে বেশি ঢুকছে। ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ যেমন অর্থনীতির জন্য সহায়ক হবে, তেমনি বাংলাদেশের জনশক্তিরও কদর বাড়বে। প্রশাসনের নজরদারি আরও কঠোর করা উচিত। তবে ভ্রমণ ও বিনিয়োগের জন্য বিদেশিদের আকৃষ্ট করার উদ্যোগকে আরও জোরালো করা দরকার। ফেরত পাঠানোর মাধ্যমে কোনো ভুল বার্তা যেন না যায়, সেটাও লক্ষ রাখতে হবে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ