২৫ মার্চের অপারেশন সার্চলাইটের পর তাজউদ্দীন আহমদ আর ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম কী করে ঢাকা থেকে বের হলেন, পৌঁছালেন কলকাতায়, তার বর্ণনা পাওয়া যাবে আমীর-উল ইসলামের বয়ানে। সীমান্তে ভারতীয় এক অফিসার এসে বলেন, তাঁদের যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়েই ছাউনিতে তাঁরা নিতে এসেছেন। জানালেন, তাজউদ্দীন আহমদ আর আমীর-উল ইসলামের আগমনবার্তা ইতিমধ্যেই কলকাতায় পৌঁছে গেছে। ছাউনিতে বিএসএফের আঞ্চলিক প্রধান গোলক মজুমদার এলেন। তিনি জানালেন, হাইকমান্ডের নির্দেশেই তিনি এসেছেন।
মুক্তিসংগ্রামে বাংলাদেশকে ভারতের সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বান জানান তাঁরা। জবাবে গোলক মজুমদার বলেন, ‘আপনাদের আবেদনের জবাব শুধু প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীই দিতে পারবেন।’ গোলক মজুমদারের জিপে করেই তাঁরা কলকাতা যাত্রা করেন। দমদম এয়ারপোর্টে বিএসএফপ্রধান রুস্তমজির সঙ্গে দেখা হলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘শেখ মুজিব কোথায়?’
প্রশ্নটি বারবার শুনতে হয়েছে, তাই তাঁরা সবখানে একই উত্তর দিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমরা তাঁর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাচ্ছি। তিনি জানেন, আমরা কোথায় আছি। তিনি আমাদের দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছেন। সময় হলে বা প্রয়োজন দেখা দিলে তিনি উপযুক্ত স্থানে আমাদের সঙ্গে দেখা করবেন।’
আসাম হাউসে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হলো।
১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল দিল্লি যাওয়ার ব্যবস্থা হলো ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য। গোলক মজুমদার সঙ্গে যাচ্ছেন। রাত ১০টায় গোপনে একটি মিলিটারি মালবাহী বিমানে তাঁরা চড়ে বসলেন। পুরোনো রাশিয়ান বিমানটি বিকট আওয়াজ করে। বিমানে যাত্রীদের বসার জায়গা নেই। ক্যানভাসের বেল্ট দিয়ে তাদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সেভাবে বসা কঠিন। কিছুক্ষণের মধ্যে সে ক্যানভাস বিছিয়ে তাঁরা দুজন শুয়ে পড়েন। ভোরের দিকে তাঁরা দিল্লি পৌঁছান।
৪ এপ্রিল ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তাজউদ্দীন আহমদ। এই সাক্ষাৎকারের ফলে বোঝা যায়, ভারত এই যুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
সূত্র: আমীর-উল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি