করোনার ধাক্কা শেষে আসন্ন বড়দিনকে সামনে রেখে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির মাধ্যমে বড় লাভের আশায় বুক বাঁধছেন সাধারণ চিংড়ি চাষি থেকে রপ্তানিকারকেরা।
রপ্তানি বন্ধ থাকায় গত বছর যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন তা পুষিয়ে ওঠার চেষ্টায় আছেন তাঁরা। তবে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় রয়েছে শঙ্কাও।
দেশের সাদা সোনা খ্যাত সব থেকে বড় শিল্প চিংড়ি খাত। সনাতন, আধা নিবিড়, সেমি ইনসেটিভসহ নানা পদ্ধতিতে ২ লক্ষ ৭৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয় গলদা ও বাগদা চিংড়ি। আর দেশের মোট উৎপাদিত চিংড়ির অধিকাংশই আসে দক্ষিণাঞ্চল থেকে। করোনার কারণে গত বছর চিংড়ি রপ্তানি এক প্রকার বন্ধ ছিল। আর্থিক ক্ষতির মুখে অনেকেই চিংড়ি চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। সংকটে পড়েছিলেন দেশের বড় বড় চিংড়ি রপ্তানিকারকেরা।
তবে কমেছে করোনার প্রভাব। আবারও আশায় বুক বেঁধেছেন খুলনা অঞ্চলের চিংড়ি চাষিরা। লাভের প্রত্যাশা করছেন রপ্তানি কারকরাও। আধা নিবিড় পদ্ধতিতে প্রতি একরে গড়ে ৮০ হাজার পোনা ছেড়ে সাড়ে চার মাস চাষ করে চার হাজার কেজি চিংড়ি উৎপাদন করতে সক্ষম হন চাষিরা। উৎপাদিত চিংড়ি প্রসেসিং করে ফ্রিজিং করা হয়। পরে প্যাকেটজাত করে প্রস্তুত করা হয় রপ্তানির জন্য। তবে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, সরকারি অনুদান না পাওয়াসহ নানা কারণে বাড়ছে চিংড়ির উৎপাদন খরচ। এতে উৎপাদনও কম হয়েছে বলে দাবি তাঁদের।
জেলা মৎস্য অফিসের হিসেব অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে খুলনা থেকে ৩৬টি কোম্পানির মাধ্যমে ৩৩৭২৭.৫৫ মেট্রিক টন চিংড়ি রপ্তানি করা হয়। যার মূল্য ২৪১৫.২০ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থ মৌসুমের প্রথম চার মাসে ৩৫টি কোম্পানির মাধ্যমে এখনো পর্যন্ত ১৪,৪৬২ মেট্রিক টন চিংড়ি রপ্তানি করা হয়েছে। যার মূল্য ১৩৩৫.২০ কোটি টাকা।
মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘করোনার কারণে গত অর্থবছরে চিংড়ি রপ্তানি কম ছিল। তবে চলতি অর্থ বছরে রপ্তানি বেড়েছে। তবে রপ্তানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে উৎপাদন খরচ।’
ট্রাস্ট সি ফুড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একে এম ফজলুল হক লিটন বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে জাহাজ ভাড়া। যে কারণে উৎপাদন খরচ, চিংড়ি রপ্তানি খরচ বেড়েছে। এইভাবে চললে রপ্তানিকারকেরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।’
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি এস হুমায়ুন কবির বলেন, ‘করোনার পর চিংড়ি শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন। এই জন্য সহজ শর্ত ব্যাংক ঋণের দাবি করেন তিনি।’
অপরদিকে খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, ‘করোনার ধাক্কা সামলিয়ে যাতে চিংড়ি শিল্প টিকে থাকতে পারে সেই সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।’