সিগনেট প্রেসের খুব নাম হয়েছিল একসময়। এই নামের পেছনে ছিলেন দিলীপকুমার গুপ্ত, ডিকে নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বয়স তখন কুড়ি ছোঁয়নি। কৃত্তিবাস পত্রিকার সূত্রে এরই মধ্যে কয়েকবার ডিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তিনি। ডিকে একদিন বললেন, ‘পত্রিকা তো হলোই, এবার তরুণদের নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে হয়।’
কথাটা মনে ধরল তরুণদের। একটা নাম চাই প্রতিষ্ঠানের। সুনীলকে বড় বড় প্রতিষ্ঠিত বুদ্ধিজীবীর কাছে সংগঠনের নামের ব্যাপারে পাঠালেন ডিকে। নীহাররঞ্জন রায়, আবু সয়ীদ আইয়ুব, বুদ্ধদেব বসু, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, শম্ভু মিত্রদের কাছে গিয়ে সুনীল পাড়লেন কথাটা। কিন্তু হঠাৎ করে কী নাম দেওয়া যায়?
সবাই সময় চাইলেন, শুধু শম্ভু মিত্র বললেন, ‘আমরা নাম দেনেওয়ালা নই। যারা নিজেদের ক্লাবের নাম নিজেরা ঠিক করতে পারে না, তাদের নিয়ে আমি মাথা ঘামাতে চাই না।’
শেষে ডিকেই দিলেন নাম—‘হরবোলা’। প্রথমেই হবে নাটক। সুকুমার রায়ের ‘লক্ষ্মণের শক্তিশেল’ নাটকটি করাবেন কমলকুমার মজুমদার। গায়ের রং পালিশ করা কালো, ধবধবে সাদা কলিদার পাঞ্জাবি ও ধুতি, হাতে বেমানান চটের থলে। ফরাসি ভাষার অসাধারণ পণ্ডিত।
কীভাবে নাটক করার আগে জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র ও সন্তোষ রায়ের গান আর উচ্চারণ শিখতে হলো, সে কথা আরেকবার বলা যাবে। এখানে ফিরে আসব সিগনেট প্রেসের বইয়ের ব্যাপারে। হরবোলা করা সুনীল তখনো নিজের বই ছাপানোর কথা কল্পনায়ও আনতে পারেননি। কিন্তু সে সময় বই বিষয়ে ডিকে কী বলেছিলেন, সে কথা তাঁর বুকে গেঁথে গিয়েছিল। ডিকে বলেছিলেন, ‘লেখার চেয়ে পড়ার জন্য সময় বেশি দেওয়া দরকার, যা পড়বেন তা নিজের লেখায় উল্লেখ না করাই ভালো।
অনেক বাঙালি লেখকের লেখায় দেখি অকারণে বিদেশি লেখক বা বইয়ের নাম ফুটে বের হয়। তাতে বোঝা যায়, পড়াশোনাটা এখনো হজম হয়নি।’ সুনীল সে কথা মনে রেখেছিলেন।
সূত্র: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, অর্ধেক জীবন, পৃষ্ঠা ১৪৫-১৪৭