শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নুরপুর ইউনিয়নের তিন গ্রামে বুনো শূকরের হানায় নষ্ট হয়েছে ধানের খেত। সুরাবই, পুরাসুন্দা ও লাদিয়া গ্রামের প্রায় ৩০০ একর আমন ধানের খেত নষ্ট হয়েছে। ১৫-২০ দিন যাবৎ চলছে এই তাণ্ডব। পাকা ধান ঘরে তোলার সময় এ ভোগান্তিতে ক্ষতির শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকেরা। তবে বুনো শূকরের আক্রমণ ঠেকাতে এখন পর্যন্ত সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের এসব জমির পাশে রঘুনন্দন পাহাড় রয়েছে। ধান পাকার মৌসুম এলেই পাহাড় থেকে দল বেঁধে জমিতে এসে হানা দেয় বুনো শূকরের দল।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইতিমধ্যে কাঁচা-পাকা ধানের বেশ কিছুসংখ্যক জমিতে বুনো শূকরের আক্রমণে জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। জমির বাকি ফসল বাঁচাতে
কৃষকেরা যৌথভাবে জমিতে রাতের বেলা মশাল জ্বালিয়ে পাহারা দিচ্ছেন। এ ছাড়াও জমির পাশে বাঁশ দিয়ে মাচাং বানিয়ে অবস্থান করছেন। কেউ কেউ রাতে কিছুক্ষণ পরপরই বেশ কয়েক রকম হুইসেল বাজান।
সুরাবই গ্রামের কৃষক মো. শাহিন মিয়া বলেন, ‘প্রতিবছরই এ রকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে আমাদের কিন্তু সরকার থেকে কোনো সহায়তা আমরা পাচ্ছি না। যেসব জমিতে একরপ্রতি ২০ থেকে ২৫ মণ ধান হতো, বন্য শূকরের তাণ্ডবে সেখানে পাঁচ থেকে ছয় মণ ধান হয়। আমাদের সোনার ধান বাঁচাতে আমরা নিজেরাই সম্মিলিতভাবে কষ্ট করে যাচ্ছি।’
এই বিষয়ে কৃষক মো. হান্নান মিয়া বলেন, শূকর কখনো গভীর রাতে, আবার কখনো ভোররাতে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ধানের খেতে নামে। যে জমিতে এরা নামে সে জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট করে ফেলে। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই, এই পাহাড়ের কিনার দিয়ে যেন তারকাঁটা বেড়া দেওয়া হয়। তাহলে আমাদের ফসল আর নষ্ট হবে না।’
সুরাবই গ্রামের হেলিম মিয়া বলেন, ‘রাত হলেই এদের ভয়ভীতি দেখানোর জন্য আমরা মশাল জ্বালিয়ে দিই, যেন আগুন দেখে ওরা ভয় পায়। কিন্তু বুনো শূকরেরা খুবই হিংস্র। আমরা রাতে অনেক ভয় নিয়েই জমিতে ফসল পাহারা দিয়ে আসছি, এদের আক্রমণ থেকে আমরা বাঁচতে চাই।’
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, পাহাড়ে খাদ্যসংকটের কারণে বুনো শূকর ধানের জমিতে নেমে আসছে। বন বিভাগ থেকে পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করলে ওরা ধান খেতে আসত না।
এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শহিদুর রহমান জানান, আসলে বন বিভাগ থেকে বুনো শূকরদের রক্ষা করার নির্দেশনা রয়েছে। কৃষকদের ফসল বাঁচাতে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।
পদ্ধতিগুলো হলো মাটি থেকে ৫-৬ ফুট উঁচু করে মাচাং বানিয়ে সেখানে টিন বেঁধে শব্দ করা কিংবা মশাল জ্বালিয়ে ভয়ভীতি দেখানো। এদের তাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু কোনোভাবেই তাদের মারা যাবে না।
মো. শহিদুর রহমান আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে জানলেও আমাদের তেমন কিছু করার নেই। বন-জঙ্গলে ওদের জন্য আমরা আলাদা খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারছি না।’