নিজেকে বিভিন্ন মন্ত্রীর স্বজন বলে পরিচয় দিতেন। তাঁর মধুর ও চতুর কথার জালে মানুষ ফাঁসতেন। সেই জালে কখনো সাগরে রাখা স্ক্র্যাপ জাহাজকে নিজের বলে বিভিন্নজনকে বিনিয়োগে উৎসাহী করে টাকা হাতিয়ে নিতেন, আবার কখনো অন্যের জমি নিজের বলে জাল দলিল বানিয়ে বিক্রি করতেন।
কয়েক বছরে এভাবে বিভিন্নজনের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী (৪২) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গতকাল সোমবার দুপুরে র্যাব-৭ চান্দগাঁও ক্যাম্প কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। র্যাব জানায়, মেজবাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে ২২টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি মামলায় তিনি পরোয়ানাভুক্ত আসামি। দীর্ঘ চেষ্টার পর র্যাব তাঁকে আটক করতে সক্ষম হয়। গত রোববার পাঁচলাইশ থানার হামজারবাগ এলাকা থেকে মেজবাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি হাটহাজারী উপজেলার কাটিরহাট গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বাবা একসময় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
মেজবাহ উদ্দিন এইচএসসি পাসের পর বাবার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে জাহাজ কাটা ব্যবসা শুরু করেন। ২০০৮ সালের পর তাঁর ব্যবসায় লোকসান হয়। এরপর নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি প্রতারণা শুরু করেন।
র্যাব-৭ অধিনায়ক এম এ ইউসুফ বলেন, র্যাব বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে যতজন প্রতারককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে, তাঁদের মধ্যে মেজবাহ অন্যতম।
ইউসুফ বলেন, ২০১৫ সালে শতকোটি টাকার পুরোনো একটি জাহাজ স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির জন্য সীতাকুণ্ডের কুমিরার সমুদ্র উপকূলবর্তী খাজা শিপইয়ার্ডে আনা হয়। সেই জাহাজসহ আরও কয়েকটি স্ক্র্যাপ জাহাজ আনার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্নজনকে ব্যবসায় অংশীদারত্বের প্রস্তাব দেন মেজবাহ। বিনিয়োগকারীরা যাচাই-বাছাই করে যাতে প্রতারক মেজবাহের কথার সত্যতা পান, সে জন্য তাঁর সহযোগী হিসেবে ২০-২৫ জন লোককে মাসিক বেতনে নিযুক্ত করেন। তাঁদের অনেকেই স্ক্র্যাপ জাহাজটিতে থাকতেন। তাঁরা মূলত মেজবাহের ব্যবসার সত্যতা আছে বলে তথ্য দিতেন বিনিয়োগকারীদের। এভাবে বিশ্বাস স্থাপন করে সাধারণ ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে উৎসাহী করতেন। তাঁর কথার জালে মানুষ সহজেই ফেঁসে যেতেন।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব আরও জানায়, একই প্রতারক চট্টগ্রাম নগরীর বাড়াইপাড়া এলাকায় একটি জমির ভুয়া দলিল দেখিয়ে অন্তত ১০ জনের কাছে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তার মেজবাহ উদ্দিন ঘনঘন অবস্থান পরিবর্তন করতেন। একাধিক সিম ব্যবহার করতেন। যাতে কেউ তাঁকে খুঁজে না পান।