এমন মানুষ হয়তো খুব কম পাওয়া যাবে যাঁরা মৌসুমি ফল খেতে পছন্দ করেন না। এখন চলছে ফলের মৌসুম। স্বভাবতই ফলপ্রেমীরা বাজারে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়বেন ফল কিনতে। আমাদের দেশের বাজারে যে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল বেশি কেনাবেচা হয়, সে কথা কোনো গবেষণা ছাড়াই বলে দেওয়া যায়। আর এখানেই ব্যবসায়ীরা তাঁদের মুনাফা খুঁজে বেড়ান। মুনাফা খোঁজা দোষের কিছু নয়, কিন্তু সেটা যদি হয় অসাধু উপায়ে, তবে তা চিন্তার ব্যাপার!
যেমন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী ও বিরামপুরের বাজারগুলোতে যে কাণ্ড ঘটছে তা কিন্তু কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেয়। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে অপরিপক্ব লিচু।ব্যবসায়ীরা নিজেরাই জানিয়েছেন, বেশি লাভের আশায় লিচুপ্রেমীদের জন্য আগেভাগে ফল নিয়ে এসেছেন বাজারে।
তাঁদের মতে, এসব লিচু স্থানীয় ও বোম্বাই জাতের। তাঁরা বিভিন্ন এলাকায় বাগান কিনে নেন, এরপর লিচু খুচরা বিক্রি করেন। আগাম বিক্রি করলে দাম পাওয়া যায় খানিকটা বেশি।
কিনতে গিয়ে কেউ কেউ লিচু মুখে নিয়ে বলছেন, এই লিচুর প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে না, ফলগুলো টক। রোদে ঝলসে খানিক লাল হলেও লিচুগুলো আসলে কাঁচা। আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেছেন, এসব লিচু পরিপক্ব হতে আরও দিন দশেক সময় লাগবে। এগুলো না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাকিলুর রহমান জানিয়েছেন, অপরিপক্ব লিচু খেলে কিডনি বিকল, ডায়রিয়াসহ আরও মারাত্মক শারীরিক সমস্যা হতে পারে; বিশেষ করে শিশুদের জন্য তা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
ফলে কেমিক্যাল ব্যবহার করলে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দিনাজপুরের উপপরিচালক মমতাজ বেগম। কিন্তু যাঁরা অল্প লাভের আশায় দিনাজপুরের বাজারগুলোতে অপরিপক্ব লিচু বিক্রি করছেন, তাঁদের ব্যাপারটা কি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবে? কেউ যদি এই অপরিপক্ব লিচু খেয়ে অসুস্থ হয়, সেই দায় কে নেবে? এ প্রশ্নগুলো মাথায় ঘুরপাক খাওয়ার আগে এটা নিশ্চিত করা জরুরি, লিচুচাষি ও ব্যবসায়ীদের কাছে যেন জোর প্রচারণা চালানো হয় অপরিপক্ব লিচুর অপকারিতা নিয়ে। সেই সঙ্গে তা জানা উচিত লিচু ক্রেতাদেরও।
ফলচাষিরা ব্যবসায়ীদের অপরিপক্ব ফল নিতে বাধা দিলে সেগুলো বাজারে যাবে না। আবার ব্যবসায়ীরাও লোভ না করলে সেগুলো বাজারে নেবে না। আর বাজারে যদি কাঁচা লিচু চলেও যায়, তাহলে ক্রেতারা সাবধানতা অবলম্বন করে সেই লিচু কেনা থেকে বিরত থাকতে পারেন। এই চক্রটা আবার উল্টোও হতে পারে।
ব্যবসায়ীরা কি তাঁদের সন্তানদেরও এই কাঁচা লিচু খাওয়াচ্ছেন? নাকি তাঁদের জন্য থাকবে বাজারের সেরা লিচু, কয়েক দিন বাদে যেগুলো পাকবে? যেদিন নিজের সন্তানদের সঙ্গে ক্রেতাদের এক সারিতে দেখতে পারবেন এই ব্যবসায়ীরা, সেদিনই এই জালিয়াতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। তার আগে নয়।