যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার ২৭টি বিলের কৃষকদের দুর্বিষহ দিন শেষ হচ্ছে না। জলাবদ্ধতায় দিন দিন সম্বলহীন হয়ে পড়ছেন তাঁরা। বিল ভবদহের কারণে জমি থাকলেও ফসল ফলাতে না পেরে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে তাঁদের। কেউ কেউ বদলে ফেলছেন পেশা।
এসব বিলের কোনো কোনো বিল টানা ৯ বছর জলাবদ্ধতার কারণে ফসল হয় না। শ্যাওলা জমে ভরাট হয়ে আছে বিল। নিরূপায় এ অঞ্চলের কৃষকেরা এখন শেওলা কুড়াচ্ছেন।
কোনো কোনো বিলের কৃষকেরা নামমাত্র মূল্যে মৎস্যঘের মালিকদের কাছে জমি হারি দিয়ে রেখেছেন। অথচ এক বিঘা জমির জন্য বছরে পান ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। গবাদিপশু পালন ছিল এ অঞ্চলের মানুষের আয়ের আরও একটি বড় মাধ্যম। কিন্তু বাড়িতে পানি থাকায় সেটাও দুরূহ হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে অভয়নগরের বিল ঝিকরায় দেখা যায়, কিছু কৃষক দিনভর ছোট্ট ডিঙি নৌকায় শ্যাওলা কুড়িয়ে তা বিক্রি করে চালাচ্ছেন সংসার। ভোরে সূর্য ওঠার আগেই ছোট্ট ছোট্ট ডিঙি নিয়ে তারা নেমে পড়েন বিলে। শুরু করেন শ্যাওলা কুড়ানোর কাজ। এক ডিঙি শ্যাওলা কুড়াতে লেগে যায় প্রায় তিন ঘণ্টা। শ্যাওলা কুড়িয়ে বিলসংলগ্ন সড়কে স্তূপ করে রাখেন তাঁরা।
সকাল ১০টার দিকে আসে ঘেরমালিক মহাজনদের নসিমন-করিমন। সেই নসিমন-করিমনে তাঁরা এসব শ্যাওলা তুলে দেন। বিনিময়ে এক নৌকা শ্যাওলার দাম হিসেবে পান ১৫০ টাকা। আর তা দিয়েই চলে পরিবারের ভরণপোষণ। বর্তমানে ভিন্নধর্মী এ পেশায় জড়িত হয়েছেন এ এলাকার ২৫-৩০ জন কৃষক।
উপজেলার রাজাপুর গ্রামের এমনই একজন কৃষক সুকুমার ঘোষ। তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, যাঁরা শ্যাওলা কুড়ানোর কাজ করছে, তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই বিলে ফসলি জমি রয়েছে। কিন্তু জলাবদ্ধতায় ৯ বছর বিল ডুবে থাকায় ফসল ফলাতে পারে না। উপায়ন্তর না পেয়ে তারা এ পেশা বেছে নিয়েছেন।
অনেকেই সন্তানদের লেখাপড়া চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। কেউ কেউ মাঝপথে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে পরিবারের হাল ধরেছে। ফসল না হওয়ায় শত শত কৃষক নওয়াপাড়া নদীবন্দর এলাকায় ঘাটশ্রমিকের কাজ করছেন। ভাগ্য বিড়ম্বনায় তাঁদের সুখের দিন হারিয়ে গেছে।