নারায়ণগঞ্জে গড়ে উঠছে একের পর এক মিনি কারখানা। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রেশন বা লাইসেন্স ছাড়াই চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। রেজিস্ট্রেশনভুক্ত না হওয়ায় বছরে কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
কলকারখানা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জে লাইসেন্স ছাড়াই কয়েক হাজার মিনি হোসিয়ারি, মিনি প্রিন্টিং ও মিনি ডাইং কারখানা রয়েছে। বহুতল ভবনের ফ্লোর ভাড়া নিয়ে অস্থায়ীভাবে চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। লাইসেন্সের আওতায় বা তালিকাভুক্ত না হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানের সঠিক হিসাব নেই। তবে ধারণা করা হয়, শুধু নারায়ণগঞ্জ সদরেই গড়ে উঠেছে ৫ হাজারেরও বেশি হোসিয়ারি কারখানা। এ ছাড়া প্রিন্টিং কারখানা রয়েছে প্রায় ২ হাজারের মতো।
কর্মকর্তাদের মতে, এসব কারখানা রেজিস্ট্রেশনের আওতায় এলে বছরে বড় অঙ্কের রাজস্ব পেত সরকার। অথচ সেই রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার কারণে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এসব প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্সের আওতায় আনার জন্য উদ্যোগী না হলে ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।
জেলা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়ার মতে, ‘পাড়া মহল্লায় গড়ে ওঠা হোসিয়ারি কারখানা লাইসেন্স পাওয়ার মতো উপযুক্ত নয়। তাই আবেদন করলেও লাইসেন্স দেওয়া হয় না। আবার অনেকে আবেদনও করেন না। পাশাপাশি এই দপ্তরে লোকবল সংকট থাকায় লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানের নিশ্চিত তালিকাও করা যাচ্ছে না।’
জানা গেছে, কারখানার লাইসেন্স ফি নির্ধারণ হয় শ্রমিকের সংখ্যার ভিত্তিতে। যা ক্যাটাগরি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ‘অ থেকে ক পর্যন্ত’ ১১ ক্যাটাগরিতে রেজিস্ট্রেশন ফি ভিন্ন ভিন্ন অঙ্কে নির্ধারিত। এর মধ্যে ১-৫০ জন শ্রমিকের কাজ করা প্রতিষ্ঠান অ ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত। ৫১-১০০ জন শ্রমিক কাজ করেন, এমন প্রতিষ্ঠান ই ক্যাটাগরি এবং ১০১-১৫০ জন শ্রমিক কাজ করা প্রতিষ্ঠান ঈ ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত।
অ ক্যাটাগরির রেজিস্ট্রেশন ফি বছরে ৫০০ টাকা, ই ক্যাটাগরির ফি ১ হাজার টাকা এবং ঈ ক্যাটাগরির ফি ১ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি ক্যাটাগরির ফি’র সঙ্গে আরও ১৫ শতাংশ ভ্যাট সংযুক্ত করতে হবে।
বিপুলসংখ্যক মিনি কারখানার ভবিষ্যৎ এবং লাইসেন্সের আওতায় আনার পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ জেলার উপমহাপরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়া বলেন, ‘গড়ে ওঠা মিনি কারখানাগুলো অবকাঠামোসহ নানান ক্ষেত্রে লাইসেন্স পাওয়ার অনুপযোগী। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ শহরের নয়ামাটি ও টানবাজার এলাকায় মার্কেটের ভেতরে বিপুলসংখ্যক হোসিয়ারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই ভবনগুলো একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ। এদের কোনোভাবেই আমরা লাইসেন্স দিতে পারি না। তবে অভিযান চালাতে গেলে তারা আবার ট্রেড লাইসেন্সের কাগজ দেখায়।’
নিজেদের লোকবল কম থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে সৌমেন বড়ুয়া আরও বলেন, ‘আমাদের লোকবল সংকট রয়েছে। তারপরও আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর কাজ করে যাচ্ছি। নয়ামাটি ও টানবাজার এলাকায় মার্কেটের ভেতরে অবস্থিত প্রায় ২০০ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধেও লেবার কোর্টে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। সবাইকে নিয়মিত সতর্কও করা হচ্ছে। এর বাইরে আমাদের করণীয় কিছু নেই। আর আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করারও ব্যবস্থাও নেই।’