গত মাসে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের উদুপি জেলায় একটি কলেজে কিছু শিক্ষার্থীকে স্কার্ফ বা হিজাব পরে ক্লাস করতে বাধা দেওয়া হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি রাজ্যটির আরেকটি কলেজে একজন বোরকা পরা শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত করে কিছু ছেলে। বিষয়টি নিয়ে সারা ভারতে তোলপাড় হয়। বর্তমানে হিজাব ইস্যুতে শুনানি চলছে কর্ণাটক হাইকোর্টে।
হিজাব ইস্যুতে জোর আলোচনা চলছে ভারতের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে। প্রতিক্রিয়াশীল হিন্দু জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবীদেরও হিজাব ইস্যুতে প্রগতিশীল হওয়ার ভান করতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে, প্রগতিশীলদের একটি অংশকেও হিজাব ইস্যুতে সিদ্ধান্তহীন বা বিভ্রান্তিকর ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। ভারতের অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম স্ক্রলডটকমের এক বিশ্লেষণে এসব কথা বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, হিজাববিরোধী ও হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের হঠাৎ করে প্রগতিশীল ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। তাঁদের যুক্তি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে সব ধরনের ধর্মীয় পোশাকমুক্ত। অর্থাৎ ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে তাঁরা স্পষ্ট পার্থক্য চান। কিন্তু তাঁদের নেতারাই তো ধর্মী পোশাকে, ধর্মী অনুপ্রেরণার ভিত্তিতে সব ধরনের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কাজ পরিচালনা করছেন।
তাহলে, হিন্দুত্ববাদীদের হঠাৎ সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার কারণ কী? জবাবে বলা হয়, এটা আর কিছুই না। ধর্মনিরপেক্ষতাকে সুবিধামতো ব্যবহার করা। তবে সবচেয়ে শঙ্কাজনক হলো, এর মধ্যে মুসলমান নারীদের প্রচলিত জীবন ধারাকে জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করার একটা গভীর উদ্দেশ্য আছে। এটা ভারতের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তা ছাড়া, ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
আর প্রগতিশীলদের একটা অংশের হিজাব নিয়ে দোলাচল নিয়ে স্ক্রলডটের বিশ্লেষণে বলা হয়, তাদের অবস্থান মোটা দাগে হিজাব বিরোধীদের বিরুদ্ধে। তবে হিজাবকে তারা নারী মুক্তির পথে বাধা এবং দাসত্বের শৃঙ্খল মনে করেন। অর্থাৎ তারা তাদের জীবনাচারকেই কেবল প্রগতিশীল বলে মনে করেন। কিন্তু হিজাব পরেও যে একজন নারী প্রগতিশীল হতে পারেন, তা তারা ভুলে যান। তাদের মনে রাখা দরকার, সব ধরনের আদর্শ, রাজনীতি এবং সংস্কৃতির মুক্ত প্রকাশের মধ্যেই প্রকৃত প্রগতিশীলতা বেঁচে থাকে।