বেড়ে উঠছেন যখন, তখন সন্জীদা খাতুন ভাবলেন, ভালো যদি বাসেন কাউকে, তবে তা জানিয়ে দেবেন। ক্লাস নাইনে উঠেছেন, সুতরাং এ সময় ভালোবাসার রং একটু লাগতেই পারে মনে। ঘোড়ার গাড়ি করে স্কুল থেকে ফিরছেন বাড়িতে, পথে দেখলেন এক নানা আসছেন, সঙ্গে তাঁর ছেলে। ছেলেটা ঘোড়ার গাড়ির দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসছে।
মুসলমান ঘরে এই সম্পর্কগুলোর মধ্যে প্রণয় বা পরিণয় কোনোটাই আটকায় না। আরও বার দুই সেই ছেলে বাড়িতে এলে সন্জীদা খাতুন বুঝতে পারলেন, বড়ই উথালপাতাল হচ্ছে মন। কিন্তু কী করে মনের এই চাওয়া-পাওয়ার বিবাদভঞ্জন হবে? অগত্যা ভরসা চিঠি। ছেলেটার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেল আরমানিটোলা স্কুলে ক্লাস নাইনের ছাত্র সে!
সম্বোধনহীন সে চিঠির প্রথম লাইনটি ছিল, ‘প্রথম দেখাতেই কেমন করে যে এমন ভালোবেসে ফেললাম, জানি না।’ ছোট ভাই নবাবকে (কাজী আনোয়ার হোসেন) বললেন, ‘চিঠিটা ওকে দিবি।’
ফিরে আসার পর নবাবকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হলো?’ নবাব বলল, ‘চিঠিটা খানিক পড়ে পকেটে রেখে দিল।’
চিঠির উত্তর আসে না। নবাব আর পেঁচির (সন্জীদা খাতুনের ডাক নাম) কথোপকথনে কৌতূহল হলো ছোট ভাই নূরুর। তাকেও বলা চাই। প্রথমে মৌন থাকলেও নূরুর জেদের কাছে পরাজিত হয়ে বলে দিতে হলো। এবার নূরুর জেদ, চিঠিতে কী লেখা আছে, সেটা ওকে পড়ে শোনাতে হবে। না হলে সে মাকে বলে দেবে।’
সন্জীদা বললেন, ‘মাকে বলে দিলে আমি বিষ খাব।’ নূরু কিন্তু মাকে বলে দিল। তখন লাইজলের বোতল হাতে তুলে নিলেন সন্জীদা। নিজেকে যুক্তি দিলেন, তিনি তো বিষ খাবেন বলেছেন, বিষ খেয়ে মরে যাবেন, সে কথা বলেননি। তাই একটু বিষ খেলেই হলো। লাইজলের দুই ঢোক জ্বলতে জ্বলতে নেমে গেল তার পেটে। এরপর তো চিৎকার, হল্লা, ডাক্তার ডাকা। হাসপাতালে রাত্রিবাস।
প্রেমের ঝক্কি বুঝলেন তিনি এভাবে।
সূত্র: সন্জীদা খাতুন, অতীত দিনের স্মৃতি, পৃষ্ঠা ৫০-৫২