১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ইয়াহিয়া খান তাঁর বেতার ভাষণে সব দোষ চাপিয়ে দিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের কাঁধে। দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করার জন্যই নাকি তিনি দমননীতি প্রয়োগ করেছেন।
বেতারে এই ভাষণ শোনার পর সাহিত্যিক-সাংবাদিক আবু জাফর শামসুদ্দীনের মুখ থেকে ইয়াহিয়ার উদ্দেশে একটি বাক্যই বেরিয়ে এল, ‘কুত্তার বাচ্চা! মুজিব ট্রেইটর হলে গোটা পূর্ববঙ্গই ট্রেইটর।’
২৬ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট চলছিল। আবু জাফর শামসুদ্দীনদের পাড়া মোমেনবাগে ঢুকেও গোলাগুলি করে গেল পাকিস্তানি সৈন্যরা। ২৭ মার্চ সকাল ৮টায় সান্ধ্য আইন তুলে নিলে আবু জাফর শামসুদ্দীন বাড়ি থেকে বের হলেন। সামনেই রাজারবাগ পুলিশ লাইনস। প্রায় আধা মাইল লম্বা পুলিশ লাইনসের টিনশেড পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জানতে পারলেন, রেললাইনের পাশের বস্তিগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাপ্তানবাজার, নয়াবাজার, ফুলবাড়িয়া মোড়, সদরঘাট, নীলক্ষেত এলাকা জ্বালিয়ে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমণ চালিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ছাত্রদের হত্যা করেছে।
সবাইকে অফিসে যাওয়ার হুকুম করা হয়েছে। আবু জাফর শামসুদ্দীন সেদিন অফিসে গেলেন না। বিকেল ৪টা থেকে আবার কারফিউ।
ছেলে পারভেজ আর শওকত ওসমানের ছেলে জানেসারকে পাঠিয়ে দিলেন গ্রামের বাড়িতে। বাড়িতে যে গরু আর বাছুরটা ছিল, তা পাঠিয়ে দিলেন বাসাবোয় চাচাশ্বশুরের বাড়িতে।
২৮ মার্চ স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে বলা হলো, চট্টগ্রামে যুদ্ধ চলছে। একটা বিদেশি রেডিওতে শোনা গেল, শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে পরিচালিত অস্থায়ী স্বাধীন সরকার বিদেশি সরকারগুলোর কাছে স্বীকৃতি চেয়েছে। অ্যাসোসিয়েট প্রেস অব আমেরিকার বিশেষ সংবাদদাতা ঢাকা থেকে ফিরে গিয়ে বলেছেন, ‘ঢাকায় নিরপরাধ জনসাধারণের ওপর ট্যাংক হামলা এবং বস্তিতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন।’
কাইয়ুম খান যখন বিবৃতি দিয়ে পূর্ব বাংলায় ইয়াহিয়ার এই আক্রমণ সমর্থন করলেন, তখন আবু জাফর শামসুদ্দীনের কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে এল একটি বাক্য, ‘কুত্তার বাচ্চা!’
সূত্র: আবু জাফর শামসুদ্দীন, আত্মস্মৃতি, পৃষ্ঠা: ২৩৩-২৩৫