ওপেনাররা ভালো শুরু এনে দিতে পারছেন না, পাওয়ার প্লের সর্বোচ্চ ব্যবহার হচ্ছে না, ফিনিশিং প্রত্যাশামতো হচ্ছে না। বলতে পারেন, টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের এসব সমস্যা আর নতুন কী! বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের করুণ চিত্র এখানেই শেষ নয়। ইনিংসের মাঝেও ঠিকঠাক রান তুলতে পারছে না তারা। শুরুর আর শেষের দুর্দশায় এটি কিছুটা আড়ালেই পড়ে গেছে।
ত্রিদেশীয় সিরিজের সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৪১ রান তোলে বাংলাদেশ। প্রথম ৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৪১ রান মন্দের ভালো বলাই যায়। এখান থেকে মাঝের ওভারে রানের চাকা সচল রাখতে পারলে স্কোর ১৬০-১৭০ অনায়াসে উঠে যায়। অথচ বাংলাদেশ করতে পারল ১৩৭ রান। কোথায় খেই হারাল তারা? সহজ উত্তর: ইনিংসের মাঝের ওভারগুলোয়। ৭ থেকে ১৩ ওভার—এই ৪২ বলে বাংলাদেশ তুলতে পারল ৩৩ রান।
গত ২ বছরে ইনিংসের ঠিক এই সময়ে রান তোলায় বাংলাদেশ রোমানিয়া, অস্ট্রিয়া, নেপাল, মাল্টার মতো দলগুলোর চেয়েও পিছিয়ে। গত ২ বছরে ৭ থেকে ১৩ ওভার পর্যন্ত ৪১ ইনিংসে বাংলাদেশ উইকেট প্রতি তুলেছে ১৯.০৭ রান। ওভারপ্রতি ৭ রান করে তুলেছেন দেশের ব্যাটাররা। এ জায়গায় সবচেয়ে এগিয়ে ভারত। ইনিংসের এই ওভারগুলোয় ভারত উইকেটপ্রতি তুলেছে ৩২.৩৯ রান। ওভারপ্রতি ভারতীয় ব্যাটাররা নিয়েছেন ৮.৯৬ রান করে। নিউজিল্যান্ড ম্যাচেই ইনিংসের এই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাটারদের উইকেটে রানের জন্য সংগ্রাম করতে দেখে ধারাভাষ্যকক্ষ থেকে ক্রেগ ম্যাকমিলান বলছিলেন, ‘বিশ্বকাপের আর ১ সপ্তাহও বাকি নেই। অথচ বাংলাদেশকে দেখে মনে হচ্ছে, দলটা এখনো অগোছালো।’ ধারাভাষ্যকক্ষে ম্যাকমিলানের সঙ্গী ওয়াকার ইউনুস বলছিলেন, ‘এভাবে ব্যাটিং করে ওপরের সারির দলগুলোর বিপক্ষে জেতা আসলেই কঠিন।’
ত্রিদেশীয় সিরিজে টানা দুটি ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। ইনিংসের ওই সময়ে রান তুলতে না পারার বিশ্লেষণে পাওয়ার প্লেতে রান তুলতে না পারা এবং দ্রুত উইকেট হারানোর বিষয় সামনে এনেছেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম। বিকেএসপির এই ক্রিকেট উপদেষ্টা গতকাল আজকের পত্রিকাকে বললেন, ‘পাওয়ার প্লেতে যখন আমরা উইকেট হারাচ্ছি, নতুন যে ব্যাটাররা আসছে, তারা ভালো স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করতে পারছে না। আরেকটা ব্যাপার রান রেট বাড়াতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ঝুঁকি নিতে গিয়ে সেখানেও আমরা উইকেট হারাচ্ছি। উইকেট যখনই পড়বে রান রেট কমতে থাকবে। পাওয়ার প্লেতে রান তুলতে না পারার সঙ্গে উইকেট হারিয়ে ফেলায় অন্যরা মেরে খেলার সাহসটা দেখাতে পারছে না। সিঙ্গেলের ওপর নির্ভর করে খেলতে হচ্ছে।’
পাওয়ার প্লের দুর্দশা কাটাতে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে এখন পর্যন্ত ৯টি আলাদা উদ্বোধনী জুটি দিয়ে চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। কোনোটাই থিতু হতে পারেনি। বাংলাদেশ দলের বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে—সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেব কোথা। সমস্যার সমাধানে অনেক রকম ওষুধের চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু কোনোটিতেই ‘আরোগ্য’ হচ্ছে না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে যেটি চিন্তা বাড়িয়ে দিচ্ছে আরও।