টমাস পেইন ছিলেন ইংরেজ বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার প্রবক্তা, দার্শনিক ও লেখক। তিনি ইংরেজ হলেও জীবনের পুরোটা সময় যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার পক্ষে তাঁর লেখনী দ্বারা ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন।
টমাসের জন্ম ইংল্যান্ডের নরফোক রাজ্যের থেটফোর্ডে ১৭৩৭ সালের ২৯ জানুয়ারি। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল খুবই কম। তিনি বিভিন্ন পেশা গ্রহণ করে ব্যর্থ হন। অবশেষে শুল্ক অফিসে কাজ পান। তাঁর দায়িত্ব ছিল চোরাকারবারিদের কাছ থেকে মদ ও তামাকের কর আদায় করা। জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের জন্য বেতন খুব কম ছিল। তারপরও তিনি উপার্জনের একটি অংশ বই কিনতে ব্যয় করতেন।
ইংল্যান্ডে চেষ্টা করেও প্রতিটি কাজেই টমাস যখন ব্যর্থ, তখন তিনি দেখা করলেন আমেরিকার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জনক বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিনের সঙ্গে। ফ্র্যাঙ্কলিন তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিতে পরামর্শ দিলেন। টমাস যখন সেখানে আসেন, তখন ইংল্যান্ডের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ চরমে পৌঁছেছিল। এখানে পৌঁছে তিনি বিখ্যাত ‘পেনসিলভানিয়া’ পত্রিকায় লেখা শুরু করেন। একসময় এই পত্রিকার সম্পাদক হন।
এরপর তিনি বুঝতে পারেন মার্কিনদের জন্য একমাত্র সমাধান হলো নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করা। এ জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার পক্ষে ১৭৭৬ সালে লেখেন তাঁর বিখ্যাত পুস্তিকা ‘কমন সেন্স’। এটি তাঁদের স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে বারুদের মতো কাজ করে।
এরপর তিনি স্বাধীনতা আন্দোলন ত্বরান্বিত করার জন্য একজন সৈনিক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ‘দ্য আমেরিকান ক্রাইসিস’ নামে একটি পুস্তিকা লেখেন।
যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীনতা পাওয়ার পর তিনি কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিভাগের সেক্রেটারি হন। আবার তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে যান। সেখানে গিয়ে লেখেন ‘রাইটস অব ম্যান’ নামে একটি বই। এই বই তাঁকে দার্শনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। ১৮০২ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন।
এই দার্শনিক ১৮০৯ সালের ৮ জুন মারা যান। তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় শুধু ছয়জন লোক যোগ দিয়েছিলেন, কারণ তিনি খ্রিষ্টধর্মকে উপহাস করেছিলেন।