অনেক ফুটবলবোদ্ধা প্রায়ই বলে থাকেন, ‘ফুটবল ১৯৯২ সালে শুরু হয়নি।’ তবে এই বছরে পাল্টে গিয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাটির অনেক কিছু। ৩০ বছর আগে কী হয়েছিল আসলে? ইংলিশ ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিযোগিতা ‘ফুটবল লিগ ফার্স্ট ডিভিশনের’ নাম পাল্টে রাখা হয় ‘প্রিমিয়ার লিগ’। নতুন নামের সঙ্গে যেন পাল্টে যায় মাঠের লড়াইও।
১৫ আগস্ট ১৯৯২ সালে যাত্রা শুরু প্রিমিয়ার লিগের। এই বছর তার ৩০তম বার্ষিকী। যাত্রা শুরুর পর থেকে প্রিমিয়ার লিগের হাত ধরে অনেক পরিবর্তন এসেছে ফুটবলে। তবে ৯০ দশকে একপেশে দাপট দেখায় স্যার আলেক্স ফার্গুসনের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। প্রিমিয়ার লিগের প্রথম দুই মৌসুমে ফার্গুসনের অধীনে শিরোপা জেতে ম্যান ইউনাইটেড। এই তিন দশকে ফুটবলপ্রেমীদের অনেক রুদ্ধশ্বাস লড়াই, রোমাঞ্চ ও নাটকীয়তা উপহার দিয়েছে বিশ্বের সেরা লিগটি। শুধু ইংল্যান্ডেই নয় সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে প্রিমিয়ার লিগের জনপ্রিয়তা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই লিগের বিভিন্ন ক্লাবের সমর্থক।
এবার একটু পরিসংখ্যানের দিকে তাকানো যাক। প্রিমিয়ার লিগের যুগে ১১ হাজার ৬৫৬ ম্যাচে গোল হয়েছে ৩১ হাজার ১৬টি। স্কোরশিটে নাম উঠেছে ২ হাজার ৫২৮ ফুটবলারের। প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত খেলেছেন ১২০টি ভিন্ন দেশের ৪ হাজার ৫৩৪ ফুটবলার। তাঁদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬৩২ জন ইংল্যান্ডের। দুইয়ে থাকা ফ্রান্সের খেলোয়াড় ২২১ এবং ২১০ জন তিনে থাকা স্কটল্যান্ডের।
প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা অ্যালেন শিয়েরার। লিগের ০.৮৪ শতাংশ গোল করেছেন সাউদাম্পটন, ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স ও নিউক্যাসল ইউনাইটেডের হয়ে খেলা সাবেক এই ইংলিশ স্ট্রাইকার। গোলদাতার চেয়েও প্রিমিয়ার লিগে কার্ড দেখা খেলোয়াড়ের সংখ্যা বেশি। মোট কার্ড দেখেছেন ৩ হাজার ২১৭ ফুটবলার (৭১ শতাংশ)। আর কার্ড দেখানো হয়েছে ৩৫ হাজার ৩১২টি। এর মধ্যে লাল কার্ডের সংখ্যা ১ হাজার ৭০১। সবচেয়ে বেশি ৮টি করে লাল কার্ড দেখেছেন রিচার্ড ডান, ডানকান ফার্গুসন ও প্যাট্রিক ভিয়েরা। সর্বোচ্চ ১২৩টি হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছে গ্যারেথ বেরিকে।
প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন ৫০ ক্লাবকে দেখা গেছে। এর মধ্যে শিরোপা জিতেছে সাত দল। অবনমন হয়েছে ৪২ দলের। মুদ্রার দুই পিঠই দেখেছে তিন ক্লাব—ম্যানচেস্টার সিটি, ব্ল্যাকবার্ন ও লেস্টার সিটি। মোট ৯৫৫ ম্যাচ গোলহীন ড্র হয়েছে। যেটি ম্যাচের হিসাবে ৮.২ শতাংশ। ১০ বা এর বেশি গোল হয়েছে পাঁচ ম্যাচে। সবচেয়ে বড় স্কোর ১১ গোলের। ২০০৭ সালে রিডিংয়ের বিপক্ষে ৭-৪ ব্যবধানে জেতে পোর্টসমাউথ।
তত্ত্বাবধায়কসহ এখন পর্যন্ত ২৬৫ জন কোচকে দেখা গেছে প্রিমিয়ার লিগে। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন স্টিভ কুপার ও এরিক টেন হাগ। ২০২২-২৩ মৌসুমের শুরুর প্রথম সপ্তাহেই তাঁদের দেখা গেছে ডাগআউটে। শতভাগ জয় আছে মাত্র ছয় কোচের। এঁদের মধ্যে কজন অল্প সময়ের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৬ সালে আর্সেন ওয়েঙ্গার আর্সেনালে আসার আগে প্যাট রাইস যে তিন ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেন, প্রতিটিতে জয় পেয়েছেন। পূর্ণকালীন কোচদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭৪ শতাংশ জয় পেপ গার্দিওলার।
১৮ কোচ তাঁদের প্রতিটি ম্যাচে হেরেছেন। এঁদের মধ্যে ১৫ জন কাজ করেছেন ভারপ্রাপ্ত কোচ হিসেবে। চার ম্যাচের চারটিতে হেরে বরখাস্ত হয়েছিলেন ক্রিস্টাল প্যালেসের কোচ ফ্রাঙ্ক ডি বোর। সব ম্যাচে হারের তালিকায় আছেন নটিংহ্যাম ফরেস্টের কুপার ও ম্যানইউর টেন হাগ। অবশ্য প্রিমিয়ার লিগের ডাগআউটে এখন পর্যন্ত তাঁরা মাত্র এক ম্যাচে ডাগআউটে দাঁড়িয়েছেন।
গত তিন দশকে সরাসরি স্টেডিয়ামে গিয়ে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ দেখেছেন ৩৬৮ মিলিয়ন দর্শক। অবশ্য তাঁদের অনেকে একই ব্যক্তি। আর টিভির পর্দায় কতসংখ্যক লোক ম্যাচ দেখেছেন, তার তো ইয়ত্তাই নেই।
৩০ পেরোলেও প্রিমিয়ার লিগের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গ্যালারিতে তো বটেই। টিভি পর্দাতেও প্রতিনিয়ত বাড়ছে দর্শকের সংখ্যাও। এর মধ্যে বাড়ছে তারকাদের উপস্থিতি ও অর্থের ঝনঝানিও। সামনের দিনগুলোতে এই লিগের প্রসার কোথায় গিয়ে থামে, সেটাই দেখার অপেক্ষা।