সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৩ গ্রামের দলিত জনগোষ্ঠীর ৭৩১টি পরিবারের স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটেশন, ন্যাপকিন ব্যবহার ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় উন্নতি হলেও বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে ।
এলাকা ঘুরে জানা গেছে, দলিত এনজিও ওয়াশ এসডিজির প্রকল্প ২০১৮ সাল থেকে সদর উপজেলার আগরদাঁড়ী, বল্লী ও ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নে ওয়াশ কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজ করছে। ফলে নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানার ব্যবহার, নারীদের পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে নিরাপদ ন্যাপকিন ব্যবহার, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়া সম্পর্কে তথ্য এলাকার দলিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে।
এতে ওই এলাকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে সদর উপজেলার এই ১৩টি গ্রামের দলিত জনগোষ্ঠীর ৭৩১টি পরিবারের মধ্যে ৮০ শতাংশ পরিবারে এখনো গভীর নলকূপের অভাব রয়েছে। ফলে নিরাপদ পানি পান করতে পারছেন না তাঁরা।
আগরদাড়ি ইউনিয়নের বাবুলিয়া ঋষিপাড়া, ইন্দিরা কায়পুত্রপাড়া, চুপড়িয়া ঋষিপাড়া, রামেরডাঙ্গা ভগবেনেপাড়া ও কাশেমপুর হাজামপাড়ার প্রায় ২৫২টি পরিবারের নারী-শিশু মিলে প্রায় ১১৬০ জন মানুষ উপকারভোগীর তালিকায় রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটেশন, নারীরা পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে নিরাপদ ন্যাপকিন ব্যবহার, সাবান ব্যবহার ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
বল্লী ইউনিয়নের কাঁঠালতলা ঋষিপাড়া, মুকুন্দপুর কারিকরপাড়া ও রায়পুর ভগবেনেপাড়ার ১৭৫টি পরিবারের প্রায় ৮৭৫ জন মানুষ নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটেশন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
এ ছাড়া ঝাউডাঙা ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া ঋষিপাড়া, বলাডাঙ্গা কারিকরপাড়া, মাধবকাঠি কলোনীপাড়া, আখড়াখোলা মোড়লপাড়া ও ওয়ারিয়া কায়পুত্র পাড়ার ৩০৪টি পরিবারের ১৫২০ জনের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি সংকটে রয়েছে। ৩টি ইউনিয়নের ১৩টি পাড়ার যেসব অগভীর নলকূপ আছে সেগুলোর অধিকাংশই আর্সেনিকযুক্ত। এসব পাড়ার অনেকের আর্সেনিক ও আয়রনযুক্ত নলকূপ এখনো পাকা করা হয়নি। নলকূপের গোড়া ময়লা আবর্জনায় ভরা।
চুপড়িয়া ঋষিপাড়ায় কোনো গভীর নলকূপ নেই। তারা দূর থেকে নিরাপদ পানি সংগ্রহ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু স্যানিটেশনের অবস্থা মোটামুটি ভালো। ৯৫ ভাগ মানুষ সাবান দিয়ে হাত ধৌত করে খাবার খায়।
বাবুলিয়া রিনা দাস, রামপ্রসাদ দাস, আশালতা দাস, দিপালী দাস, মঞ্জুরি দাস, কল্যাণী দাস, শম্পা দাস জানান, এখানে দলিত ভিলেজ কমিটির সদস্য ৩০ জন। এই এলাকায় কোনো গভীর নলকূপ নেই। স্যানিটেশনের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো। তারা তাদের এলাকায় গভীর নলকূপ বসানোর দাবি জানান।
ইন্দ্রিরা কায়পুত্রপাড়ার সাধনা বিশ্বাস ও চন্দনা বিশ্বাস জানান, এখানে বেশির ভাগ মানুষ দূর থেকে পানি সংগ্রহ করে অথবা অনিরাপদ পানি পান করে।
কাঁঠালতলার সন্ধ্যা রাণী দাস ও মণিমালা জানান, এখানকার পানি বেশির ভাগ নলকূপ আর্সেনিকযুক্ত।
ঝাউডাঙা ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া ঋষিপাড়ার সুমন দাস, সাধন দাস, রাধারানী ও আরতি রানী জানান, এখানে কোনো গভীর নলকূপ নেই। এখানকার মানুষ সবাই ফিল্টারের পানি পান করে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর সহকারী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, ‘২০২১-২২ অর্থ বছরের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে আগরদাড়ী, বল্লী ও ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নে ২০৭টি নিরাপদ পানির জন্য গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা আমরা প্রত্যেক ইউনিয়নে ৮০ ভাগ নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করেছি। যেস্থানে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নেই, ভবিষ্যতে সেখানে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে।’