মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জে বদিউল আলম উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে অবৈধভাবে ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের যান দাঁড় (পার্কিং) করে রাখা হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে বিদ্যালয়টির দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। ছুটির সময় হুড়োহুড়ি করে স্কুল থেকে বের হতে গিয়ে গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যথা পাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এ ছাড়া এই যানবাহনের ফাঁকফোকরে বখাটেরা দাঁড়িয়ে থেকে ইভ টিজিং করছে বলে জানিয়েছে ছাত্রীরা। এদিকে মানিকগঞ্জের একটি বিদ্যালয়ের মাঠে পিকআপের চাপায় শিক্ষার্থী-শিক্ষক নিহত হওয়ার ঘটনা জানার পর উৎকণ্ঠায় রয়েছেন অভিভাবকেরা।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বদিউল আলম উচ্চবিদ্যালয়টিতে ২০২২ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২ হাজার ১৩৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়টির মূল ফটক থেকে শুরু করে সম্মুখ ভাগের পুরো অংশে সারি করে যানবাহন দাঁড় করে রাখা হয়। এসব মূলত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাজারের বিভিন্ন আড়তের জন্য পণ্য নিয়ে আসা ট্রাক। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি। বাজার কমিটি বহুবার এই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
বিদ্যালয়টি উপজেলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়। কিন্তু যানবাহন দাঁড় করে রাখায় দূর থেকে মনে হয়, এটি যেন একটি টার্মিনালের প্রবেশদ্বার। কখনো কখনো অতিরিক্ত গাড়ি রাখায় স্কুলটিতে প্রবেশ এবং বের হওয়ার পর্যাপ্ত রাস্তাটুকুও থাকে না। স্কুলে যাওয়ার সময় ও ছুটি হলে হুড়োহুড়ি করে বেরোতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বহুবার।
অভিভাবক নাজমুন্নাহার লুৎফা বলেন, ‘স্কুলের সামনে এভাবে গাড়ি রাখার কারণে ছাত্রীদের সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বখাটেরা গাড়ির ফাঁকে বসে থেকে মেয়েদের ইভ টিজিং করে। এখন মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় থাকি। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে মেয়েদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিতে হবে।’
অভিভাবক জামাল হোসেন বলেন, ‘ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে আমরা আতঙ্কে থাকি। স্কুলের সামনের এই গাড়ি পার্কিং বন্ধ করে ইভ টিজিং রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করছি।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘গাড়ি পার্কিংয়ের সমস্যা দীর্ঘদিনের। এটা বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও এখনো কোনো প্রতিকার পাইনি।’
কোম্পানীগঞ্জ বাজার কমিটির আহ্বায়ক চন্দন কুমার বণিক গাড়ি পার্কিংয়ের বিষয়ে বলেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করেও গাড়ি পার্কিং বন্ধ করতে পারিনি। প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা নিতে পারব।’
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসিম বলেন, ‘গাড়ি পার্কিংয়ের বিষয়টি আমাকে কেউ অবহিত করেননি। কিন্তু ইভ টিজিং প্রতিরোধে বিদ্যালয়ের আশপাশে প্রতিদিন পুলিশের টহল টিম দায়িত্ব পালন করছে।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সফিউল আলম তালুকদার বলেন, ‘ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করে গাড়ি পার্কিংয়ের বিষয়টি প্রতিকারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অভিষেক দাশ বলেন, ‘এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি বা মৌখিকভাবেও কেউ অবহিত করেননি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’