। তাঁরা ‘দৈনিক নবযুগ’ রেখেছিলেন পত্রিকাটির নাম। শেরেবাংলা ভেবেছিলেন কোনো হিন্দু এই পত্রিকা কিনবে না। আর যদি পত্রিকার নামে মুসলমানত্ব না থাকে, তাহলে মুসলমানরাও এই পত্রিকা কিনবে না। নজরুল-মুজাফ্ফর বোঝালেন, দেশের এখন যে অবস্থা তাতে দুই সম্প্রদায়ের লোকই পত্রিকাটি কিনবে। ১৯২০ সালের ১২ জুলাই এই সান্ধ্য দৈনিকটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
দৈনিক নবযুগ খুব সহজেই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এর পেছনে ছিল নজরুলের জোরালো লেখা। হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষ এই পত্রিকাকে তাদের নিজের পত্রিকা হিসেবে গণ্য করল। রয়েল সাইজে একটা কাগজের দাম করা হয়েছিল এক পয়সা। পত্রিকায় তখন নজরুল-মুজাফ্ফরের নাম ছাপা হতো না। প্রধান পরিচালক হিসেবে ছাপা হতো এ কে ফজলুল হকের নাম।
মজার ব্যাপার হলো, দৈনিক পত্রিকায় কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতা নজরুলের ছিল না। বিভিন্ন পত্রিকার বড় বড় সংবাদ পড়ে সেগুলোই সংক্ষিপ্ত করে নিজের ভাষায় লিখতে শুরু করেছিলেন নজরুল। নজরুলের ভাষার প্রেমে পড়েই পাঠকেরা সেই পত্রিকাকে আপন করে নিয়েছিল। বলার অপেক্ষা রাখে না, অনেক ঝানু সাংবাদিক এই কৌশল আয়ত্ত করতে হিমশিম খেয়ে যান।
নজরুলের দেওয়া শিরোনামগুলো বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। নজরুল বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাসের কবিতা পড়েছিলেন। সেই সব কবিতা থেকেও শিরোনাম তৈরি করতেন। শিরোনাম থেকে বাদ যাননি রবীন্দ্রনাথও।
একবার ইরাকের রাজা ফয়সালকে নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। নজরুল সেই সংবাদের শিরোনাম করেছিলেন,
‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার
পরান সখা ফয়সুল হে আমার।’
সূত্র: মুজাফ্ফর আহমদ, কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা, পৃষ্ঠা ৩২-৩৩