আনন্দবাজারে তখন কাজ করেন শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়। সে সময় সন্তোষকুমার ঘোষের সঙ্গে একটা দুর্ঘটনা ঘটে। সন্তোষকুমার সোয়াইন বলেছিলেন। শ্যামল তাঁকে মেরেছিলেন চড়। তাতে পড়ে গিয়ে সন্তোষকুমারের হাত ভেঙে গিয়েছিল। শ্যামলই তাঁকে সাবধানে ইজিচেয়ারে শুইয়ে দিয়েছিলেন। পানি খাইয়েছিলেন। আয়োডেক্স এনে মালিশ করেছিলেন। তারপর অফিস থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।
এরপর অফিসের নিয়ম অনুযায়ী বিচার হলে শ্যামলের বিরুদ্ধে এসেছিল সাসপেনশনের অর্ডার। ছয় মাস অর্ধেক বেতন পাবেন। নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ১৮ বছর ৭৫ শতাংশ বেতন পাবেন বসে বসে, ইনক্রিমেন্টসহ।
সে সময় সমরেশ বসু খোঁজ নিয়েছেন শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের। সম্পাদক হিসেবে মধুসূদন মজুমদার, মণীন্দ্র রায় লেখা ছেপেছেন। এর মধ্যে একদিন অভীক বাবু অনুরোধ করেন ফিরে আসতে। সন্তোষকুমার ঘোষ বললেন, ‘তুমি কষ্ট পাও, তা আমি চাই না।’ প্রতিষ্ঠান বলল, দুজনই দুজনের কাছে ক্ষমা চাইলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
শ্যামল আর সন্তোষ এক বারে গিয়ে খাওয়াদাওয়া করলেন। তখন শ্যামলের বয়স ৪৩, সন্তোষের ৫৫। দুজনই দুজনের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে চিঠি লিখলেন। সন্তোষ ঘোষ তাঁর চিঠি দিলেন শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়কে, শ্যামল দিলেন সন্তোষ ঘোষকে। এরপর শব্দ-তোলা, ধোঁয়া ওড়ানো সিজরিং চিকেন খেলেন। এরপর সন্তোষকুমার ঘোষ বললেন, ‘সব তো মিটে গেল, আর ও চিঠি রেখে কী করবে?’
শ্যামল সন্তোষ ঘোষকে ফিরিয়ে দিলেন তাঁর চিঠি। নিজেরটা ফেরত নিতে ভুলে গেলেন।
এরপর আনন্দবাজার চিঠি দিল, ‘আপনি সন্তোষবাবুর কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছেন, আপনাকে ক্ষমা করে শাস্তি তুলে নেওয়া হলো। আপনার কাটা বেতন ফেরত দেওয়া হচ্ছে।’
প্রতিষ্ঠানের চিঠিতে ‘ক্ষমা’ শব্দটা ভালো লাগল না শ্যামলের। সন্তোষ ঘোষকে ডেকে তিনি বললেন, ‘আপনার লেখা আপনার দুঃখপ্রকাশের চিঠি দেননি?’
সন্তোষকুমার ঘোষ বললেন, ‘ভুলে যাও শ্যামল।’
শ্যামল ভুললেন না। কয়েকটি ইনক্রিমেন্ট দিয়ে শ্যামলের পদোন্নতি দেওয়া হলেও তিনি চাকরি থেকে পদত্যাগ করলেন।
সূত্র: আমার শ্যামল, ইতি গঙ্গোপাধ্যায়, পৃষ্ঠা ৫১-৫৫