মৌলভীবাজারের হাওরাঞ্চলে বোরো চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। জেলার হাকালুকি, কাওয়াদীঘি, হাইল হাওরসহ ছোট-বড় হাওর এবং এর উপরিভাগে চলছে বোরো চাষাবাদের উৎসব। বাজারে দাম বাড়ায় এ জেলায় বোরো চাষে আগ্রহ বেড়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৮০০ হেক্টর। এর মধ্যে হাওরে ২৭ হাজার ৮০০ হেক্টর। উপরি অংশে ২৯ হাজার হেক্টর। এ বছর চাল উৎপাদনের ১ লক্ষ্যমাত্রা ৮৮ হাজার ৮৫৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে স্থানীয় জাতের ৫৪০ মেট্রিক টন, হাইব্রিড-৪০ হাজার ১৬ মেট্রিক টনসহ মোট চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৯ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন।
কাওয়াদীঘি ও হাইল হাওর ঘুরে দেখা যায়, শীত উপেক্ষা করে জমি প্রস্তুত ও রোপণের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। কেউ জমির আইল ঠিক করছেন, কেউ সেচের জন্য নালা তৈরি, আবার অনেকে তৈরি জমিতে পানি সেচ দিয়ে ভিজিয়ে রাখছেন। আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে কেউবা বীজতলা থেকে চারা তুলে তা জমিতে রোপণ করছেন। এদিকে ধানের দাম বাড়ায় ধান চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের।
কাওয়াদীঘি হাওরপারের কৃষক রেজাক মিয়া বলেন, ‘ধানের দাম আগের চেয়ে বেশি হওয়ায় আমরা কৃষকেরা আগ্রহ নিয়ে চাষ করছি। পৌষ মাসের শুরুতে রোপণ শুরু করেছিলাম মাঘ মাস পর্যন্ত।’
অন্য কৃষক সুমন বিশ্বাস বলেন, ‘এই বছর ২০ বিঘা জমিতে বোরো চাষাবাদ করব। পানির কিছু সমস্যা রয়েছে। এ ছাড়া নিজেরা কাজ করি, সঙ্গে শ্রমিক নেই। শ্রমিক পাওয়া যায় না, পেলে অধিক টাকা দিতে হয়।’
শীত উপেক্ষা করে সন্ধ্যা পর্যন্ত বোরোর জমি প্রস্তুত ও চারা রোপণের কাজ করতে হয়। আবার জমিতে হাল চাষ ও কাঁধে করে গোবরও জমিতে দিতে হয়, জানান কৃষক পরিমল বিশ্বাস।
কৃষক পনিক দাস বলেন, ‘কিস্তিতে ২০ হাজার টাকা নিয়ে ৫ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেছি। বোরো ফসল আমাদের সম্বল। এ দিয়েই সংসার চলে।’
জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সামছুদ্দিন আহমদ জানান, সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া কৃষকদের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান কাজ করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, ‘আশা করি এ বছর বোরো ফসলের ভালো ফলন হবে। ধানের দাম বাড়ায় কৃষকেরা ধান চাষে আগের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহী হয়েছেন। আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি, মাঠ ঘুরে তাঁদের সমস্যা শুনে পরামর্শও দিচ্ছি।’