নাটোরের লালপুর উপজেলার ইটভাটার মালিকেরা বিপাকে পড়েছেন। হঠাৎ করে কয়লার মূল্য বৃদ্ধিতে ভাটায় ইট পােড়ানো শুরু করতে পারছেন না তাঁরা। বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে লাখ লাখ কাঁচা ইট প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এখন সেগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা মালিকদের। এদিকে, উপজেলার বিভিন্ন ভাটায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষজন পরিবার-পরিজন নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন।
গতকাল বুধবার উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি কাঁচা ইট শুকিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ভাটার চুলা ইট পোড়ানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। নভেম্বর মাসের আগেই ইট পোড়ানোর সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছিল। কাঁচা ইট তৈরি করা থাকলেও কয়লা সংকটে পোড়ানোর কাজ বন্ধ রয়েছে।
মঞ্জিলপুকুরের ভিআইপি ভাটার মালিক মো. নিপুন জানান, গত বছর সর্বশেষ ৮ হাজার টাকা টন দরে কয়লা কিনেছিলেন। এবার কিনতে হচ্ছে ১৯ হাজার টাকা দরে। কিন্তু অগ্রিম টাকায় ইট বিক্রি করায় ভাটা চালাতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
ভিএসএল ইটভাটার মালিক খায়রুল বাসার ভাদু বলেন, ‘প্রতি বছর নভেম্বর মাসের শুরুতেই ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ শুরু হয়। কিন্তু এবার এখনো কয়লা জোগাড় হয়নি। এ অবস্থায় কবে নাগাদ ভাটা চালু করতে পারব তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’
রামকৃষ্ণপুরের এমএইচকে ভাটার মালিক আবু বকর সিদ্দিক পলাশ বলেন, উপজেলার ৩৬টি ইটভাটায় প্রায় ১৮ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। কয়লার দাম বাড়ায় সংকটে ভাটা ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি শ্রমিকেরাও বিপদে পড়েছেন।
ইটভাটার শ্রমিক আলেক আলী জানান, ছোটবেলা থেকেই ইটভাটায় কাজ করেন। প্রতিবছর ইট পোড়ার মৌসুমে ৩-৪ মাস কাজ করে সেই আয় দিয়ে সারা বছর সংসার চালান। চলতি বছর এখনো ভাটায় কাজ শুরু না হওয়ায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
নির্মাণকাজের ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন ইটের অপেক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকটি উন্নয়নকাজ ধীরগতিতে চলছে। কয়লার কারণে ইটের দাম বাড়ায় প্রকল্প ব্যয়ও বাড়বে।’
ঠিকাদার ও ভাটা মালিক হাসেম আলী বলেন, আমদানি করা কয়লার অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে ইটের বাজারে প্রভাব পড়েছে। উৎপাদন কমে গেছে। এ বছর প্রতিটি ইটের দাম ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
কয়লা সরবরাহকারী লালপুরের আলাউদ্দিন জানান, মান অনুযায়ী এবার ১৮ থেকে ২১ হাজার টাকা টন দরে ইটভাটায় কয়লা সরবরাহ করছেন। এর সঙ্গে গাড়ি ভাড়া আলাদাভাবে নেওয়া হচ্ছে।