বঙ্গোপসাগরে আবারও বেড়েছে জলদস্যুদের উৎপাত। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপকূলের জেলেরা। গত তিন দিনে বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১০টি ট্রলারে জলদস্যুরা হামলা চালিয়েছে। এতে একজন নিহত ও প্রায় ২৫ জেলে আহত হয়েছেন।
জেলে ও ট্রলার মালিকদের দাবি, সাগরে ইলিশ শিকারে তাঁদের সুরক্ষা দিতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মাছ শিকার শেষে ফেরার পথে সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের মান্দারবাড়িয়া এলাকায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে জলদস্যুদের হামলায় পাথরঘাটার বাসিন্দা মুসা (৩২) নামের এক জেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ছাড়া ওই ট্রলারের অন্যান্য জেলেদের বেদম মারধর করে জাল ও মাছ লুটে নেয় দস্যুরা।
জেলেরা জানিয়েছেন, সোম, মঙ্গল ও বুধবার এই তিন দিনে বঙ্গোপসাগরে গণ দস্যুতা চালিয়েছে সংঘবদ্ধ জলদস্যুর বাহিনী। বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১০টি ট্রলারে হামলা চালিয়ে জেলেদের মারধর ও জিম্মি করে জাল, মাছ, জ্বালানি তেল ও অন্যান্য রসদ সামগ্রী লুটে নিয়েছে। সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ডাকাতের হামলায় অন্তত ১৪ জেলেকে আহত হয়েছেন।
সবশেষ গত বুধবার বঙ্গোপসাগরে দস্যুদের হামলার শিকার হয় এফবি রুদ্র নামের একটি জেলে ট্রলার। ওই ট্রলারটি গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে হামলায় আহত ১৪ জেলেকে নিয়ে ফিরে আসে।
বরগুনা জেলা জেলে সমিতির সভাপতি দুলাল হোসেন বলেন, ‘আমরা যারপরনাই আতঙ্কিত। মৌসুমের শুরুতে ৬৫ দিন, ফের ২২ দিন, এখন আবার জাটকা শিকারে নিষেধাজ্ঞা। এর মধ্যে আমরা সাগরে বড় ফাঁসের জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করতে শুরু করেছি। এখন আবার শুরু হয়েছে জলদস্যুদের উৎপাত। আমরা মাছ শিকার করব, নাকি বন্ধ রাখব এখন সরকারই বিবেচনা করুক।’
জলদস্যুদের হঠাৎ উৎপাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপকূলের জেলেরা। উপকূলীয় ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘এমনিতেই এবার আমরা ইলিশ শিকার করতে পারিনি। মাছ না পাওয়ায় ট্রলার মালিকদের খুবই দুরবস্থা। এর মধ্যে দস্যুদের এমন উৎপাত চললে আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত কয়েক বছর সাগরে দস্যুদের তৎপরতা তুলনামূলক কম ছিল। কিন্তু গত কয়েক দিনে যে অবস্থা হয়েছে, এতে জেলেরা রীতিমতো ভীত–সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। আমরা এ অবস্থা থেকে নিস্তার পেতে সরকারের পদক্ষেপ কামনা করছি।’
কোস্টগার্ড মোংলা জোনের অপারেশন কমান্ডার লুৎফুর রহমান বলেন, ‘সাগরে জেলেদের নিরাপত্তা জোরদারে আমরা তৎপরতা বৃদ্ধি করেছি। এ ছাড়া কারা এই দস্যুতার সঙ্গে জড়িত তাঁদের চিহ্নিত করতেও কাজ করছে আমাদের গোয়েন্দা টিম। আশা করি আমরা দস্যুতা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হব।’