তারাগঞ্জে এখনো যাঁরা ভূমিহীন ও গৃহহীন রয়েছেন তাঁদের সরকারিভাবে ঘর দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এই নির্দেশ দিয়েছেন।
তোফাজ্জল হোসেন গতকাল উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের ফরিদাবাদ আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি ঘর পাওয়া ২০০ পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি প্রকল্পের কাজের প্রশংসা করে নতুন করে ঘর দেওয়ার জন্য উপকারভোগীদের তালিকা করতে বলেন।
কথা হয় আশ্রয়ণ প্রকল্প ঠাঁই পাওয়া ময়মোনা (৬৫) বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘২০ বছর আগোত স্বামী মারা গেইছে। ভিক্ষা করে সংসার চালাও। আগোত বনপাড়াত মাইনষের বাড়িত আছনু। অ্যালা সরকার মোক নিজের ঘর বানে দিছে। দুই বাড়ি বেড়ে এখন পাকার ঘরোত রাইত কাটাও।’
হাড়িয়ারকুঠির জলুবার গ্রামের মেহেরন বেওয়ারও (৬৩) একই অবস্থা। তাঁর স্বামী ১০ বছর আগে মারা গেছেন। তিনিও ভিক্ষা করে চলেন। গৃহহীন এই নারী মুজিববর্ষ উপলক্ষে ফরিদাবাদ আশ্রয়ণ প্রকল্পে জমিসহ পাকা ঘর পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মুই আগোত খুপড়িত আছনু। অ্যালা মোর পাকার ঘর। খাও না খাও, এখন শান্তিতে ঘুম পাইরার পাও।’
হাজীরহাট বাজারের পাশের ক্যানেলে খুপরিতে থাকতেন জামিনি বালা (৬২) ও হরেন্দ্র (৮০) দম্পতি। হরেন্দ্র বয়সের ভারে ন্যুব্জ। জামিনি বিভিন্ন বাড়ি ঘুরে যা আনেন তাই দিয়ে চলে সংসার। তাঁরা তাঁরাও ফরিদাবাদ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঠাঁই পেয়েছেন।
জামিনি বলেন, ‘আগো থাকার খুব কষ্ট আছলো। এখন নাই। খুব ভালো আছি। এক বেলা খাইলেও এখন বুড়াসহ পাকার ঘরোত সুখে আছি।’
প্রকল্প পরিদর্শন শেষে সচিব তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘তারাগঞ্জের কাজের মান অনেক ভালো বলে এত দিন কানে শুনতাম। এখন নিজ চোখে দেখলাম। তারাগঞ্জে ভূমিহীন, গৃহহীন আরও যাঁরা আছেন তাঁদের তালিকা করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছি। তাঁদেরও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ঘর দেওয়া হবে।’
সচিব জানান, বিআরডিবি, সমাজসেবা, পল্লী উন্নয়ন, যুব উন্নয়ন, সমবায়, মহিলা ও শিশু এবং মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে এখানে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। পুকুরে মাছ চাষের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিভিন্ন অধিদপ্তর থেকে যাঁদের দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ নেওয়া আছে তাঁদের চাহিদা মোতাবেক ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।
এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, তারাগঞ্জে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়া সবাই ভূমিহীন, গৃহহীন। এখানে প্রকল্পের কাজের মান ও ঘর পাওয়া ভূমিহীন, গৃহহীনদের দেখে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া আরও তালিকা করতে বলেছেন। তাঁদেরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ঘর দেওয়া হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান লিটন বলেন, তারাগঞ্জের আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শনে এসে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব কাজের মান দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আরও ঘর দেওয়ার জন্য তালিকা করার কথা বলেছেন। এটা তারাগঞ্জবাসীর জন্য বড় পাওয়া।
পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওয়াহাব ভূঞা, রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইলোরা ইয়াসমিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিয়ার রহমান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আলতাফ হোসেনসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের নেতা।