শরীয়তপুরের নরসিংহপুর আলুর বাজার লঞ্চঘাট এলাকায় পদ্মার শাখানদীতে দেখা দিয়েছে নাব্যতাসংকট। ফলে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ড্রেজিং করে নাব্যতাসংকট কাটানোর চেষ্টা চলছে। তবে ড্রেজিং হচ্ছে ধীরগতিতে। এতে শরীয়তপুর-চাঁদপুর, শরীয়তপুর-ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশালের সঙ্গে নৌরুটে লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বিঘ্নিত হচ্ছে শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরি চলাচল।
গতকাল শনিবার আলুর বাজার ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, নাব্যতা না থাকায় এক মাসের বেশি সময় ধরে লঞ্চঘাট এলাকায় ড্রেজারের পাইপ ফেলে রাখা হয়েছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে ঘাটে লঞ্চ ভিড়তে পারছে না। ফলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে ভোগান্তিতে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় মোকতার দিদার বলেন, ‘প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন এই ঘাট দিয়ে। ড্রেজিং চলায় এ ঘাটে লঞ্চ ভিড়তে পারছে না। এতে মালামাল লোড-আনলোডেও সমস্যা হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাহত হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছে বালারহাট, মোল্যারহাট, সখিপুর ও ডিএমখালি বাজারের ব্যবসায়ীরা।’
স্থানীয় বালাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ এক মাসের বেশি আলুবাজার ঘাটে লঞ্চ ভিড়তে পারছে না। এতে ট্রলারে করে ঘাটের যাত্রীদের মাঝ নদীতে নেওয়া হচ্ছে। পরে লঞ্চে তুলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। শিশু, বয়স্ক ও নারী ভোগান্তি পড়ছেন বেশি। এ ব্যাপারে ঘাটের লোকজনদের বলে কোনো সমাধান হচ্ছে না। তারা ড্রেজিংয়ের জন্য সমস্যা হচ্ছে বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন।’
পাশের ফেরি ঘাট ব্যবহারকারী দিদার পরিবহনের চালক মো. বাদশা মিয়া বলেন, ‘শীতকালে নদীর পানি কমে যাওয়া। তখন নাব্যতা সংকটে ঠিকমতো ফেরি চলে না। এ ছাড়া একটি ড্রেজার দিয়ে থেমে থেমে ড্রেজিং করায় এই ঘাটটি প্রায় বন্ধ থাকে। ফলে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়।’
যশোর থেকে আসা ট্রাক চালক আনোয়ারুল বলেন, ‘নদীর পানি কমে যাওয়া ও নাব্যতা সংকটে এ পথে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ঘাটের সামনে ড্রেজিং করায় প্রায় দিন ঘাটে সমস্যা লেগেই থাকে। এতে যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা পারাপারের জন্য অপেক্ষা করে। কখনো কখনো এক দিন বসে থাকতে হয়।’
শরীয়তপুর জেলা পুলিশের টিআই মো. খোরশেদ বলেন, ‘নাব্যতার জন্য ড্রেজিং করা হচ্ছে। তবে বিলম্বিত হওয়ায় ঘাটে এখন আর লঞ্চ ভিড়ছে না। অপর দিকে ফেরি পারাপার ও ঘাটে সমস্যা থাকায় এ পথে যাত্রী ও গাড়ি সংখ্যা কমে যাচ্ছে।’
বিআইডব্লিটি এর প্রকৌশলী (ড্রেজিং) সফিক আহমেদ বলেন, ‘নরসিংহপুর ঘাটের নাব্যতা বজায় রাখার জন্য একটি ড্রেজার প্রায় ৩৫ দিন ধরে কাজ করছে। লঞ্চঘাট বন্ধের বিষয়ে আমার জানা নেই।’
নরসিংহপুর ফেরি ঘাটের ইজারদার মো. জিতু মিয়া বলেন, ‘নাব্যতার জন্য ড্রেজিং চলছে। যাত্রী পারাপার সহজ করতেই ড্রেজিং করা হচ্ছে। কিন্তু ড্রেজিংয়ে যাত্রীদের কোনো উপকার হচ্ছে না। এই সমস্যা সমাধানের কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
বিআইডব্লিউটি এর উপপরিচালক কাউসার আহমেদ বলেন, ‘ফেরি ঘাটে ড্রেজিং চলছে। নদীটি সরু হওয়ায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ড্রেজিং কত দিন চলবে তা আমি বলতে পারব না।’
এ বিষয়ে ড্রেজিং বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এই ঘাটে দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী আবু বক্করের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
আলুরবাজার ফেরিঘাটের ড্রেজিং কাজের তদারককারী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘প্রতিবছর আলুর বাজার ঘাটের নদী থেকে ৪ লাখ ঘনমিটার মাটি অপসারণ করা হয়। এবারও করা হচ্ছে। আর কাজ শেষ হতে ১০-১২ দিন লাগবে।’