হোম > ছাপা সংস্করণ

দেরিতে জবাব দিলে কী হয়

অর্ণব সান্যাল, ঢাকা 

ধরুন, ব্যাপক ব্যস্ততায় আপনার সময় কাটছে। ঠিক সেই সময়টায় টুং করে উঠল মোবাইল ফোন। জানান দিল কোনো ই-মেইল বা মেসেঞ্জার-হোয়াটসঅ্যাপে এসে জমা হওয়া বার্তার। কিন্তু সেসব দেখে, বুঝে জবাব দেওয়ার মতো সময় আপনার হাতে বা পায়ে—কোথাও নেই। অগত্যা বার্তা ‘সিন’ আর হলো না, জবাব দেওয়া তো দূর অস্ত। ওদিকে কেউ একজন বসে আছেন উত্তরের আশায়। আপনিও কি নেই জবাব লেখার আশায়? কারণ আপনার মনে যে খচখচ করছে—‘ইশ্, জবাব দিতে দেরি হচ্ছে। উনি কী ভাববেন!’

এমন পরিস্থিতিতে কম-বেশি আমরা সবাই পড়ি। বার্তা এলেই দ্রুত জবাব দেওয়ার একটি চল চালু হয়েছে একবিংশ শতাব্দীর এই পৃথিবীতে। তথ্যপ্রযুক্তি ও মোবাইল ডিভাইসের কল্যাণে এখন মানুষকে টোকা দেওয়া (এ যুগের ভাষায় ‘পোক’ করা) খুব সহজ। অনেক অ্যাপ আছে, মেইল অ্যাড্রেস আছে। শুধু ঘন্টার সুতোয় টান দিলেই হলো। আর সেই ঘন্টা শুনেই বার্তা পাওয়া ব্যক্তির হৃৎস্পন্দন দ্রুত হতে পারে। কারণ আজকের সমাজে যে দ্রুত জবাব দেওয়া ‘সুআচরণ’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছে। একবার ভেবে বলুন তো, বার্তার প্রত্যুত্তর দ্রুত সময়ে পেলে আপনার কি ভালো লাগে না?

হ্যাঁ, লাগে। বিলক্ষণ লাগে। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, দ্রুত জবাব পেলে দুজন মানুষের মধ্যে একধরনের কার্যকর যোগাযোগের সেতু সৃষ্টি হয়। আর মানুষ যে সামাজিক জীব, তা তো শৈশব থেকেই বিভিন্ন রচনায় আমরা মুখস্থ করে আসছি। ফলে দ্রুত উত্তর পেতে থাকলে যোগাযোগটা বেশ মসৃণ হয়। একধরনের সম্পর্কও গড়ে ওঠে। আর সেটি বন্ধু, পরিবার ও অন্তরাত্মার প্রিয়জন—সবাই প্রত্যাশা করে থাকে। আবার অপরিচিতরাও তাৎক্ষণিক জবাবে প্রীত বোধ করে থাকেন।

চলতি মাসেই এ-সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ডার্টমাউথ কলেজের একদল গবেষক দেখতে পেয়েছেন, দ্রুত জবাব পেলে কথোপকথনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একধরনের সামাজিক যোগাযোগ গড়ে ওঠে। তাঁরা তখন একে-অপরের সঙ্গে নিজেদের সংযুক্ত ভাবতে পারেন। ফলে কথোপকথনের ফলাফল ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

অথচ যোগাযোগ সহজ থেকে সহজতর হওয়ার আগে, সেই চিঠি লেখার দিনগুলোতে, এসব পাত্তাই পেত না। মনে মনে হয়তো ভাবা হতো, চিঠি কি পেল? নাকি হারিয়ে গেল মাঝপথে? উত্তর পাওয়ার সেই অপেক্ষায় শুধু যন্ত্রণা মিশে থাকত, তা কিন্তু নয়। মধুরও হতো কখনো কখনো। অন্তত অপর পক্ষের কাছে অযাচিত চাহিদা তৈরি হতো না। আর চাহিদা তৈরি না হলে মনোভঙ্গের আশঙ্কাও উবে যায় সহজেই। যদিও চিঠির সেই যুগে আমরা অনেকেই শুরুতে লিখতাম, ‘উত্তর দিতে দেরি হয়ে গেল।’ ডাকহরকরার দিনগুলোয় সেই পরোক্ষ ক্ষমাপ্রার্থনায় কিছু যেত-আসত না। কিন্তু এখন তো মেসেজ আসার কয়েক মিনিটের মধ্যে উত্তর না পেলেই মনটা কেমন-কেমন করে!

চাইলেই কি দ্রুত জবাব দেওয়া সব সময় সম্ভব? হতেই পারে আপনার জবাব দিতে মন চাইছে না। কিন্তু আপনার সেই চুপ থাকাকেই ‘অসামাজিক’ হিসেবে ধরে নেবে মানুষ।

এখন কর্মক্ষেত্র থেকে ব্যক্তিজীবন—সবখানে সবাই জবাব চায় দ্রুত। অনেক অফিসে কোনো কোনো কর্মীর হয়তো চাকরি টিকিয়ে রাখার প্রধান যোগ্যতাই থাকে এটি। ব্যক্তিজীবনে দ্রুত জবাব না দিলে তো কুরুক্ষেত্রের সঙিন যুদ্ধ লেগে যেতে পারে! প্রিয়তম বা তমা যদি ‘আই লাভ ইউ’ লিখে পাঠায়, আর আপনি যদি ১২ ঘণ্টা পর জবাব দেন, তবে কী হবে—তা সহজেই অনুমেয়। সে ক্ষেত্রে উত্তর দিতে দেরি হলে আমাদের অনেকেরই ক্ষমা চেয়ে কথোপকথনের শুরুটা করতে হয়। সেটা কয়েক মিনিটের বিলম্বেও কখনো কখনো করতে হয়। এটি মূলত দেরি করার ‘ক্ষতি’ পূরণের চেষ্টা চালানো।

প্রচলিত ধারণা হলো, এই ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টা এখন অনেক জবাবপ্রত্যাশী আকাঙ্ক্ষাও করে থাকেন। তাঁরা ভেবেই বসেন যে ‘ক্ষমা চাওয়াই উচিত!’ না চাইলেই বরং অপর পক্ষের সম্পর্কে একধরনের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করেন অনেকে। এটিই এখনকার সামাজিক চল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। যদিও লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস ও করনেল ইউনিভার্সিটির যৌথ এক জরিপে দেখা গেছে, অন্তত অদরকারি বার্তার ক্ষেত্রে প্রেরক সময়ের বাঁধনে প্রাপকের উত্তরকে বাঁধতে চান না। সংশ্লিষ্ট গবেষক ভ্যানেসা বনস মনে করেন, দ্রুত জবাব দেওয়ার যে ‘সংস্কৃতি’ আমরা মনে স্থান দিয়েছি অন্যের কথা ভেবে, সেটি সঠিক নয়। ঢের প্রেরকই জবাব পেতে দেরি হওয়াকে নেতিবাচকভাবে নেন না। তাই ক্ষমা চাইতে চাইতে মাটিতে মিশে যাওয়ারও কোনো প্রয়োজন আদতে নেই।

জবাব দ্রুত পেলে কথোপকথনে উষ্ণতা বাড়ে। ম্যাথু হেসটন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমবিষয়ক গবেষক

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জবাব দিতে দেরি হলে ক্ষমা চাওয়ার বদলে দেরি হওয়ার কারণ জানিয়ে দেওয়া ভালো। এতে একদিকে যেমন অপরপক্ষও সন্তুষ্ট থাকে, তেমনি নিজেকেও অযাচিত ক্ষমা চাইতে হয় না। কারণ এভাবে কেবলই বিলম্বজনিত ক্ষমা চাইতে চাইতে আমাদের মনে হতে পারে, সবার চেয়ে হয়তো পিছিয়ে পড়ছি। সেটি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরা।

তবে সবচেয়ে ভালো বিদ্যুৎগতিতে উত্তর পাওয়ার প্রত্যাশা ছাড়তে পারলে। ওই প্রত্যাশা করার আগে একটিবার শুধু নিজের কথা ভাবলেই হলো। যে বিষয় জরুরি, সে ক্ষেত্রে হয়তো বার্তার নিচেই দ্রুত জবাব দেওয়ার অনুরোধ জানানো যেতে পারে। অন্যান্য বিষয়ে এটি জানিয়ে দেওয়া যায় যে উত্তর পেতে দেরি হলেও ক্ষতি নেই! তাতে নিজের প্রত্যাশায় যেমন লাগাম টানা যায়, তেমনি অন্যকেও রাখা যায় ভারমুক্ত। একটি মিথস্ক্রিয়াপূর্ণ সমাজে অন্যে ভালো থাকলেই তো নিজে ভালো থাকবেন, নাকি?

তথ্যসূত্র: পিএনএএস ডট ওআরজি, দ্য আটলান্টিক, সায়েন্স ডেইলি ও স্টাফ ডট কো ডট এনজেড

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ