আমাদের দেশের একশ্রেণির রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তা মনে হয় হাতির পাঁচ পা দেখেছেন। তাঁরা ধরাকে সরাজ্ঞান করতে শুরু করেছেন। যে সংসদ সদস্যের কাজ আইন প্রণয়ন করা, তিনি কলেজ অধ্যক্ষকে মনের সুখে কিল-ঘুষি মারছেন। দেশের সাধারণ মানুষ, সংবিধানে যাঁদের দেশের মালিক উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁদের হাত থেকে কখন কীভাবে যেন মালিকানা হাতবদল হয়ে কতিপয় নেতা-কর্মকর্তার কুক্ষিগত হয়েছে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে অসদাচরণ করাও যেন ইদানীং অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যাঁদের তপ্ত হওয়ার কথা, সেই সাধারণ মানুষ ঠান্ডা হয়ে আছেন আর যাঁদের হওয়ার কথা সহনশীল, তাঁরা রেগে আগুন তেলেবেগুন হয়ে হয় লাঠি খুঁজছেন অথবা মুখ থেকে বের করছেন অশ্রাব্য গালিগালাজ। কয়েক দিনের ব্যবধানে সংবাদপত্রে এমন কয়েকটি খবর প্রকাশিত হয়েছে, যা থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের কারও কারও বেপরোয়া মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যাচ্ছে।
উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও হলেন বড় কর্মকর্তা, বলা যায় তিনিই উপজেলায় সরকারের প্রতিনিধি। অথচ উচ্চ আদালত পর্যন্ত সম্প্রতি একজন ইউএনওর ভাষা মাস্তানের চেয়েও খারাপ বলে মন্তব্য করেছেন।
২১ জুলাই ‘নিচু জায়গায় নির্মাণ করা উপহারের ঘর পানিতে ভাসছে’ শিরোনামে অনলাইন পোর্টালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কায়সার খসরু ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর অফিশিয়াল নম্বর থেকে ফোন করে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, যা পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর প্রথমে তাঁকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। শেষে অবশ্য তাঁকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালতের জারিকারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও মোবাইল কোর্ট বসিয়ে বিচারের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ফরিদপুরের বোয়ালমারীর ইউএনও মো. রেজাউল করিম ও নাজির উকিল মিয়াকে তলব করেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে আদালত অবমাননার অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েও রুল জারি করেন আদালত।
নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেলেন ফরিদপুরের বোয়ালমারীর ইউএনও।
সর্বশেষ খবর হয়েছেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান। গতকাল মঙ্গলবার আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, একজন সাংবাদিক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের কাছে কৃষি প্রণোদনা ফলোআপের পেঁয়াজের বীজ কতজন কৃষককে দেওয়া হয়েছে, সে-সম্পর্কিত তথ্য জানতে চাইলে তিনি খেপে গিয়ে তাঁর অফিসকক্ষের দরজা বন্ধ করে সাংবাদিককে অবরুদ্ধ করে কাউকে একটা লাঠি আনার নির্দেশ দেন এবং সাংবাদিককে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আপনি আমাকে চেনেন। কথা খুব সাবধানে বলবেন। উল্টাপাল্টা কথা বললে আমি পেটাব।’
উচ্চ আদালত এমন বেপরোয়া সরকারি কর্মকর্তাদের ‘বেহেড’ বলে উল্লেখ করেছেন। এঁরা সরকারের উপকার না করে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হচ্ছেন।