১৯৫৮ সালের অক্টোবরে এল ইস্কান্দার মির্জার সামরিক শাসন। পেছনে আইয়ুব খান। এবার আবার শুরু হবে ধরপাকড়। কিছুদিন আগেই জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন জসীম উদ্দীন মণ্ডল। এখন গা-ঢাকা দিয়ে থাকা দরকার। কোথায় যাওয়া যায়? ঈশ্বরদীতে কে আছে, যার কাছে ঠাঁই পাওয়া যাবে? এক বিহারি গার্ডের কথা মনে হলো। গার্ড সাহেবের শ্বশুর অবিভক্ত ভারতে কমিউনিস্ট পার্টির বলিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। সেখানেই যাওয়া যাক। গার্ড সাহেবের স্ত্রীও জসীম মণ্ডলকে খাতিরযত্ন করতেন।
প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড় আর সন্দেহজনক বই নিয়ে গার্ড সাহেবের বাড়িতে গেলেন জসীম মণ্ডল। ঠাঁই পেলেন সেখানে। তাঁকে আশ্বস্ত করলেন গার্ড সাহেবের স্ত্রী, ‘আপনি আমার বাবার সঙ্গে কাজ করেছেন, আজ আপনার বিপদে আমরা এটুকু করব না?’
ভেতরের দিকে একটি ঘরে জসীম মণ্ডলের থাকার ব্যবস্থা হলো। দিনের বেলায় গা ঢাকা দিয়ে থাকেন তিনি, রাতে বের হন খবরাখবর সংগ্রহের জন্য।
হঠাৎ একদিন ঈশ্বরদীর ওপর দিয়ে উড়ে গেল একটা বিমান। ছড়িয়ে গেল লিফলেট। তাতে লেখা, ‘কোনো রাজনৈতিক কর্মীকে কেউ যদি বাড়িতে স্থান দেয় অথবা কারও বাড়ি থেকে যদি কোনো রকম আপত্তিকর কাগজপত্র, বই অথবা প্রচারপত্র পাওয়া যায়, তবে তাকে চৌদ্দ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হবে।’
জসীম মণ্ডল বললেন, ‘এরপর তো আর তোমাদের এখানে থাকা যায় না।
গার্ড সাহেবের স্ত্রী বললেন, ‘আপনি চিন্তা করবেন না। কিচ্ছু হবে না।’
কিন্তু বেঁকে বসলেন গার্ড সাহেব। বললেন, ‘সরকারের এই হুঁশিয়ারির পর তাঁকে কিছুতেই এখানে রাখা যায় না।’ স্ত্রী বললেন, ‘কিছুই হবে না, তুমি চুপ করো তো!’
গার্ড সাহেব বললেন, ‘দেখো, আমি সরকারি চাকরি করি। আমার চাকরিতে ক্ষতি হোক, এটা কি তুমি চাও?’
জসীম মণ্ডল পাশের ঘর থেকে বের হয়ে বললেন, ‘আমি এক্ষুনি চলে যাচ্ছি।’ এবং তিনি চলে গেলেন।
সূত্র : জসীম উদ্দীন মণ্ডল, জীবনের রেলগাড়ি, পৃষ্ঠা ১১৬-১১৮