অতিরিক্ত তাপমাত্রায় পুড়ছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বোরোখেত। ধানের শিষ হলুদ ও লালচে রং ধারণ করেছে। এদিকে পানির সংকটে ফসলি জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। তিন সপ্তাহ ধরে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় ধানে হিটশকের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে উৎপাদন কমার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাঁরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, খরায় স্বাভাবিক তাপমাত্রা অতিক্রম করায় ধানের শিষ লালচে রং ধারণ করেছে। এতে বোরো ধানের ফলনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
হাওর তীরবর্তী মীরশংকর গ্রামের কৃষক মখদ্দিস আলী বলেন, ‘তিন বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছি। এখন পানির সংকটে ধানের শিষ পুড়ে যাচ্ছে। গত বছর একই পরিমাণ জমিতে ৪০ মণ ধান পেয়েছি। এবার খরায় ২০ মণ পাব কিনা জানি না। বৃষ্টি হয়নি, খাল-ছড়ায় পানি নেই। সেচব্যবস্থা না থাকায় পানির সংকটে বড় লোকসানে পড়তে হবে।’
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে উপজেলায় বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার ২০০ হেক্টর নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড ১ হাজার ও উফশী ৭ হাজার ২০০ হেক্টর। যা গত বছরের আবাদ থেকে ৩০০ হেক্টর বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭ হাজার ৯০০ হেক্টর আবাদ হয়েছিল।
কৃষকদের দাবি, সরকার গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ প্রকল্প চালু করার। এতে হাওর অধ্যুষিত অঞ্চলে খরা ও পানিসংকট থাকবে না। তা না হলে বোরো আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন কৃষক।
মীরশংকর গ্রামের কৃষক আব্দুল খালিক বলেন, ‘ছয় বিঘার মধ্যে চার বিঘা বর্গা চাষের জন্য দিয়েছি। দুই বিঘাতে ব্রি-২৮ জাতের ধান রোপণ করেছিলাম। তাপমাত্রা ও পানির অভাবে ধানগাছ নষ্টের পথে।’
হাকালুকি হাওর তীরবর্তী ভূকশীমইল, জকিরবিল ও ধলিয়া বিলে দেখা যায়, সেগুলো শুকিয়ে মাটি ফেটে গেছে। পানির অভাবে শতাধিক হেক্টর বোরো ধানের জমি শুকিয়ে ফেটে চোচির। ধানের শিষ লালচে ও হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে।
বর্গাচাষি ভৈরবগঞ্জ এলাকার রুশম আলী বলেন, ‘গত বছর ভালো ফলন হওয়ায় এবারও লাভের আশার ৭ একর জমি বর্গা নিয়ে ধারদেনা করে আবাদ করেছি। প্রথমদিকে খাল-বিল থেকে পাম্প দিয়ে সেচ দিয়েছিলাম। এক মাস ধরে তা শুকিয়ে গেছে। সেচসংকটে ধানগাছ পুড়ে যাচ্ছে। ফলন না হলে ঋণের বোঝায় নিঃস্ব হয়ে যাব।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন বলেন, ‘দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় খাল-বিল শুকিয়ে গেছে। ধানের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টিপাত না হওয়াতে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির ওপর হওয়াতে ধানের পরাগায়নে বিঘ্ন ঘটছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ধানের শিষ হলুদ ও লাল বর্ণ হয়ে গেছে। তবে সপ্তাহখানেকের মধ্যে বৃষ্টি হলে এ সমস্যা কেটে যাবে। ফলনও ভালো হবে।
সেচের বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, এ অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির সংকট থাকায় গভীর নলকূপ বসিয়ে সেচের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। এ অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির বিষয়টি নিয়ে গবেষণাও কম থাকায় গভীর নলকূপ সেচ প্রকল্পও নেই।