হাটহাজারী উপজেলা চট্টগ্রামের উপশহর নামে খ্যাত। এ ছাড়া আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম বা হাটহাজারী মাদ্রাসা সারা দেশে পরিচিত।
এই হাটহাজারীতে মুসলিম ছাড়াও বিভিন্ন জাতিধর্মের লোকজনের বাস। এ অঞ্চলে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের পরিচায়ক হয়ে পাশাপাশি অবস্থান করছে হাটহাজারী মাদ্রাসার বাইতুল করিম নামে প্রধান জামে মসজিদ ও শ্রী শ্রী সীতাকালী কেন্দ্রীয় মন্দির।
এ মসজিদ ও মন্দিরে শুধু এক দেয়ালের ফারাক। হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রধান জামে মসজিদের মাত্র পাঁচ গজের মধ্যেই শ্রী শ্রী সীতাকালী কেন্দ্রীয় মন্দির; যা শুধু এ দেশে নয়, বিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির।
হাটহাজারী মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি জসিম উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, হাটহাজারী মাদ্রাসা ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত। ১১৯ বছরের ইতিহাসে হিন্দু সম্প্রদায় ও মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার ঘটেনি।
এ মাদ্রাসার সীমানা দেয়ালের সঙ্গে গড়ে উঠেছে হিন্দুদের কালীমন্দির। হাটহাজারীতে দুই ধর্মের অনুসারীরা সহাবস্থানে থেকে যার যার মতো করে ধর্মীর আচার-অনুষ্ঠান পালন করে। এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অসাধারণ একটি উদাহরণ।
শ্রী শ্রী সীতাকালী কেন্দ্রীয় মন্দির পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সভাপতি ড. শিপক কৃষ্ণ দেবনাথ আজকের পত্রিকাকে বলেন, সারা বিশ্বে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলেও হাটহাজারীর চিত্র সবসময় ব্যতিক্রম। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময়ও এখানে একে অপরের ওপর হামলা তো দূরে থাক, উল্টো মাদ্রাসার ছাত্ররাই পাহারা দিয়ে মন্দির রক্ষা করে। শতবছর ধরে হিন্দু-মুসলিম যার যার অবস্থানে থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে কথা হয় সীতাকালী মন্দিরের পুরোহিত ষাটোর্ধ্ব ভানু প্রসাদ ভট্টাচার্যের সঙ্গে। তিনি মুসলিম ধর্মের অনুসারীদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তিনি বলেন, প্রায় এক যুগ ধরে এ মন্দিরের সেবা করছি। কখনো মাদ্রাসার কেউ, কিংবা আশপাশের কোনো মুসলমান আমাদের জ্বালাতন করেননি। বরং তারা সবসময় আমাদের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ করেছেন।