পরিবারে নিয়ম—যেকোনো উপলক্ষই হোক না কেন, উপহার বলতে ছিল বই। জন্মদিনের আগের রাতে উত্তেজনায় ঘুম আসত না সুলতানা কামালের। ভোরে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই চোখ চলে যেত বালিশের নিচে। সেখানেই থাকত মনকাড়া একটি ঝকঝকে বই। ছোটবেলায় যে বইগুলো পেতেন, তার অনেকগুলোই ছিল দেবসাহিত্য কুটির থেকে প্রকাশিত হওয়া। দেবসাহিত্য কুটির থেকে বের হওয়া ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ পড়েছেন আর চমৎকৃত হয়েছেন। আরও ছিল ‘শুকতারা’ বলে একটি পত্রিকা। সেই পত্রিকার মনকাড়া গল্প, কবিতা, প্রবন্ধের রসে মন ভরে উঠত। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ‘টুনটুনির বই’ ভালো লাগত। একটু বড় হলে পড়তেন প্রেমেন্দ্র মিত্রের ঘনাদা, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের টেনিদা আর কতশত বই! নিজের মতো হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে শৈশব আর কৈশোরে পড়া বইগুলোর অবদান ছিল অনেক। ছয় ভাইবোনের মধ্যে বড় বোনের আগেই বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তাঁর জন্মদিনে বই উপহার নিয়ে সবাই যেতেন এবং কিছুটা সময় কাটিয়ে আসতেন।
একটু বড় হওয়ার পর সুলতানা কামালের মনে প্রশ্ন জাগল, এত নাম থাকতে বাবা-মা কেন তাঁর নাম ‘সুলতানা’ রাখলেন। বাবা কামাল উদ্দিন আহমেদ খান এবং মা সুফিয়া কামাল ছিলেন সমাজতান্ত্রিক চিন্তা-ভাবনার মানুষ। তাই সাম্যবাদী চিন্তার মানুষ কেন এ রকম রাজ-রাজড়াদের নাম ‘সুলতানা’ রাখবেন? ভাবনাটা ঘুরে ঘুরে মাথায় আসতে লাগল সুলতানা কামালের। শেষ পর্যন্ত প্রশ্নটা তুললেন বাবার কাছে। বললেন, ‘আমার নামটা সুলতানা রাখলে কেন? কারণ সুলতানা মানে তো রানি না হয় সম্রাজ্ঞী।’ বাবা যে উত্তর দিয়েছিলেন, তা চোখ খুলে দিয়েছিল সুলতানা কামালের। কামাল উদ্দিন আহমেদ খান বলেছিলেন, ‘আসলে তোমার নামটা রাখা হয়েছে বেগম রোকেয়ার “সুলতানার স্বপ্ন” থেকে। তুমি সুলতানার মতো স্বপ্ন দেখবে এবং সুলতানা যে স্বপ্ন দেখতেন—সামাজিক এমন একটা ব্যবস্থা, যেখানে নারী-পুরুষ সবাই সমান অধিকার নিয়ে বাঁচবে এবং মান-মর্যাদা নিয়ে বাঁচবে।’
সূত্র: বিধানচন্দ্র পাল সম্পাদিত ‘সেতুবন্ধন’, পৃষ্ঠা ৪৪৬