বেশি দিন আগের কথা নয়, চলতি মাসেরই দ্বিতীয় সপ্তাহে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পারইহাটি গ্রামের সবজি বিক্রেতা ইমরান মোল্লার মাদ্রাসাপড়ুয়া শিশুপুত্র জুনায়েদকে নিয়ে সম্পাদকীয় লিখেছিলাম।
ঢাকার বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থার ত্রুটি-দুর্বলতার সমালোচনা করেছিলাম। জুনায়েদ নামের শিশুটি ১১ সেপ্টেম্বর রাত ৩টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে উঠে পড়েছিল। পাসপোর্ট ও বোর্ডিং পাস ছাড়াই নিরাপত্তাকর্মীদের ফাঁকি দিয়ে উড়োজাহাজে উঠে জুনায়েদ ঘণ্টাখানেক বসে থাকে। পরে তার কাছে ভিসা-পাসপোর্ট পাওয়া না গেলে উড়োজাহাজ থেকে তাকে নামিয়ে পুলিশের জিম্মায় দেওয়া হয়।
জুনায়েদের এ ঘটনাটি তখন খবর হয়েছিল। কয়েক দিন পর জুনায়েদ আবারও খবর হয়েছে। ২২ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকার একটি খবরের শিরোনাম ‘উড়োজাহাজে চড়ার সাধ মিটল জুনায়েদের’। খবরে বলা হয়েছে, ঢাকা বিমানবন্দরে নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিদেশগামী উড়োজাহাজে উঠে পড়া সেই শিশু জুনায়েদের আকাশে ওড়ার সাধ মিটল অবশেষে। গত বৃহস্পতিবার উড়োজাহাজে ঢাকা থেকে কক্সবাজার ভ্রমণ করেছে সে। সঙ্গে তার চাচাও ছিলেন।
বেসরকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ওয়ালটন জুনায়েদকে পর্যটন শহর কক্সবাজার ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে। আকাশপথে কক্সবাজার পৌঁছানোর পর সেখানকার একটি অভিজাত হোটেলে রাখা হয়েছে জুনায়েদ ও তার চাচা ইউসুফ মোল্লাকে।
উড়োজাহাজে চড়ার সুযোগ পেয়ে বেশ খুশি জুনায়েদ। তার স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করার জন্য সে ওয়ালটনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে।
জুনায়েদের কি আর কোনো স্বপ্ন নেই? তার বয়স কম। গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান, লেখাপড়া করে মাদ্রাসায়। সে যে খুব বুদ্ধিমান, সেটা স্বীকার করতেই হবে। বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকা আসা, বিমানবন্দরের রক্ষী, নিরাপত্তাকর্মী এবং এয়ারলাইনসের লোকজনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিমানে উঠে বসা—খুব চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু তার শিক্ষাজীবনের কী হবে? বিমানে চড়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে দেশের একটি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বদান্যতায়। উচ্চশিক্ষার সুযোগ সে পাবে কি?
অভাব-অনটনের কারণে কত কত মানুষ তাদের কোনো স্বপ্ন, সাধ বা আশাই পূরণ করতে পারে না। কতজন শিক্ষা পায় না, স্বাস্থ্যসেবাবঞ্চিত থাকতে হয় কত মানুষকে।
পুরোনো দিনের একটি গানের কথা মনে পড়ছে। গানটি এমন:
আমার সাধ না মিটিল আশা না পুরিলো
সকলি ফুরায়ে যায় মা...
পৃথিবীর কেউ ভালো তো বাসে না
এ পৃথিবী ভালো বাসিতে জানে না,
যেথা আছে শুধু ভালো বাসাবাসি,
সেথা যেতে প্রাণ চায় মা।...
জীবনে কোনো সাধ-আশা পূরণ না হওয়ার আক্ষেপ নিয়ে কোনো মানুষকে যেন এই নিষ্ঠুর অথচ সুন্দর পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে না হয়, তার ব্যবস্থা কি হবে না কোনো দিন? আমাদের দেশের শিল্পপতি-ব্যবসায়ীরা যদি মানুষের স্বপ্নপূরণে এগিয়ে আসেন, তাহলে এর চেয়ে ভালো খবর আর কী হতে পারে! ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ কেবল জুনায়েদের বিমানে চড়ার সাধ মিটিয়ে তার শিক্ষার দায়িত্বভার গ্রহণ করে মানুষের পাশে থাকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।