‘ভোট মানে তো কারও লাভ, কারও লস। ভোট আসি হামার লাভ হইচে। প্রত্যেক দিন মাইকিং করি ১ হাজার টাকা কামাই হয়ছে। যায় হামার গাড়ি ভাড়া নেয়ছে, তায় খাবারও দেয়ছে। ভোট ছাড়া এ কামাই হইল না হয়।’
তারাগঞ্জের বরাতি বাজারে গত বুধবার কথাগুলো বলছিলেন উত্তর জগদীশপুর গ্রামের ইজিবাইকচালক জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় তাঁর গাড়িতে মাইক বেঁধে গানে গানে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এক প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালানো হচ্ছিল।
তারাগঞ্জের পাঁচ ইউপিতে ভোট হবে ২৮ নভেম্বর। এই নির্বাচন উপলক্ষে প্রচারকাজ জাহাঙ্গীরের মতো অনেক অটোরিকশাচালকের জন্য বাড়তি আয়ের সুযোগ নিয়ে এসেছে। সেই সঙ্গে ঢাকঢোল ও সানাইয়ের মতো বাদ্যযন্ত্র বাজানো ব্যক্তিদের কদর বেড়েছে।
উপজেলায় এবার নির্বাচনী প্রচারে রিকশা-ভ্যানের বদলে ইজিবাইক বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে বাইকের ওপর মাইক লাগিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গ্রামগঞ্জে ঘুরে ভোট চাচ্ছেন প্রার্থীর কর্মীরা।
বেলতোলীর মোড়ে প্রচারের জন্য মাইক নিয়ে ইজিবাইকে বসেছিলেন রহিমাপুর গ্রামের আলেফ মিয়া। তিনি জানান, নির্বাচনের কল্যাণে এই আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন তাঁরা। না হলে সারা দিনেও তাঁদের ৫০০ টাকা আয় হতো না।
হাড়িয়ারকুঠির ডাংগীরহাট বাজারে রিকশা-ভ্যানে মাইক যুক্ত করার সময় কথা হয় সরকারপাড়া গ্রামের রিকশাচালক সাগর মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, আগে রিকশাতে চড়েই ভোটের মাইকিং করত প্রার্থীদের লোকজন। এখন রিকশার বদলে মাইকিংয়ের জন্য অটোরিকশা ভাড়া করা হয়। অটোরিকশার জন্য দেওয়া হয় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। আর রিকশাচালকেরা পান ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
ইকরচালী ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া মোবারক হোসেন প্রামাণিক বলেন, ‘ইজিবাইকে কম সময়ে বেশি এলাকায় প্রচার চালানো যায়। তাই নির্বাচনী প্রচারে আমার মতো অন্য প্রার্থীরাও মাইকিংয়ে এবার ইজিবাইক ব্যবহার করছেন।’
এদিকে গান গেয়ে প্রচার চালানো ব্যক্তিরাও বাড়তি আয়ের সুযোগ পেয়েছেন। প্রার্থীরা তাঁদের ঘণ্টা, দিন হিসেবে ভাড়া করছেন। তেমনই একজন মানিক মিয়া। পেশায় নরসুন্দর মানিককে বুধবার দেখা গেল ইকরচালীর ফকিরপাড়া গ্রামে ইজিবাইকে চড়ে গান গানে প্রচার চালাতে। তাঁর গানে মুখরিত হয়ে উঠে আশপাশ। নতুন ধরনের গান শুনতে জড়ো হন পথচারীরা। ক্ষণিকের জন্য মিলে ভিন্ন মাত্রার বিনোদন।
মানিক বলেন, ‘হামরা যে মার্কার টাকা পাই, সেই মার্কার গান বাজাই। ভোট আইলে প্রার্থীরা হামাক ভাড়া করি নিয়া যায়। যার মার্কার গান বাজনা করি, তাঁর খাবারও খাই। একেক দিন একেকজন প্রার্থীর হয়া বাজনা বাজাই, প্রতীকে নিয়া গান করি। ভোট শেষ হইলে তো আর এই কামাই হবার নেয়।’