সুলতানা কামালের বাবা আর মা, দুজনই খুব পড়ুয়া ছিলেন। ফলে তাঁদের ছয় সন্তানও বই পড়ার মধ্যে আনন্দ খুঁজে পেত। বাবা একদিন বললেন, ‘তোমাদের লাইব্রেরির নাম দাও মণি-মঞ্জুষা।’ এর পর থেকে সব বইয়ের ওপরে তাঁরা নিজেরাই ‘মণি-মঞ্জুষা পাঠাগার’ লিখতেন। বইগুলো বন্ধুদের মধ্যে আদান-প্রদান করা হতো।
সুলতানা কামালের বাবা কামালউদ্দিন আহমেদকে অনেক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। শুধু সুফিয়া কামালের স্বামী বলেই ২৫ বছর চাকরিজীবনে তাঁর কোনো পদোন্নতি হয়নি। সংসারের দায় মেটাতে তিনি সামাজিক কর্মকাণ্ড থেকে একসময় নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন।
তিনি কখনোই তাঁর ছেলেমেয়েদের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে উৎসাহিত করেননি। সবচেয়ে ওপরে ওঠা বা সবচেয়ে ভালো করা নয়, ভালো মানে পৌঁছাতে পারাটাই হলো মুখ্য—এটা বিশ্বাস করতেন কামালউদ্দিন আহমেদ।
মা-বাবার কাছ থেকেই মানবাধিকারের ধারণাটি পেয়েছেন সুলতানা কামাল। খুব ছোট যখন, তখন একদিন তাঁদের তারাবাগের বাড়িতে হন্তদন্ত হয়ে এসেছিলেন আলী আকসাদ। তিনি তখন শান্তি পরিষদ করতেন। এসেই সুফিয়া কামালকে বললেন, ‘খালাম্মা, লুমুম্বাকে তো ওরা মেরেই ফেলল!’
লুমুম্বা কে, সেটা জানা ছিল না শিশু সুলতানার। সুফিয়া কামাল রান্না করছিলেন, কথাটা শুনে তাঁর হাতটা থেমে গেল। দুজন বসে কিছু একটা লিখলেন। একটা সভার আয়োজন করা হলো, একটা প্রতিবাদ করতে হবে।
লুমুম্বা কে, সেটা সুফিয়া কামালের কাছে জানতে চাইলেন সুলতানা। সুফিয়া কামাল বললেন, ‘তিনি একজন আফ্রিকান নেতা। কঙ্গোর নেতা। তাঁকে মেরে ফেলেছে। তিনি স্বাধীনতা চেয়েছিলেন, তিনি মানুষের ভালো চেয়েছিলেন।’
তখন থেকেই সুলতানা বুঝতে পারেন, একজন মানুষ নিজ গোত্রের না হতে পারেন, নিজ ধর্মের না হতে পারেন, তাঁর সঙ্গে কোনো আত্মীয়তা না থাকতে পারে, তিনি অচেনা হতে পারেন, কিন্তু তাঁর ওপর যদি অন্যায় করা হয়, তাঁর ওপর নির্যাতন করা হয়, তাহলে তাঁর প্রতিবাদ করা দরকার। তাঁর অধিকারের পক্ষে দাঁড়ানো দরকার।
সূত্র: বিধানচন্দ্র পাল, সেতুবন্ধন, পৃষ্ঠা ৪৫০-৪৫৪