১৯৭২ সালে ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তরের জন্য নিজ হাতে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করেছিলেন রাজমিস্ত্রি কালু মিয়া ওরফে আবুল কালাম। সেই তখন থেকে এখনো স্মৃতিসৌধের সংস্কার বা মেরামত কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি। স্মৃতিসৌধের পাশের পাথালিয়া ইউনিয়নের চারিগ্রাম এলাকায় বাস করেন কালু।
গত সোমবার স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে কথা হয় কালু মিয়ার সঙ্গে। বিজয় দিবস উপলক্ষে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ সংস্কারকাজ করছিলেন তিনি। স্মৃতিসৌধ নির্মাণের শুরু দিকের কথা স্মরণ করে কালু মিয়া বলেন, ‘তখন আমি ছিলাম লেবার। এরপরে হলাম লেবারদের সর্দার, পরে হলাম রাজমিস্ত্রি। স্মৃতিসৌধ বানানোর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাজ করেছি। স্বাধীনতার এত বছর পরে এসেও কাজ করছি। এই কাজ করে আমি আনন্দ পাই।’
কালু বলেন, ‘আমি এখানে স্থায়ী চাকরি করি না। কন্ট্রাক্টর কাজ নেয়, সেই কাজের জন্য আসি। যত দিন কাজ থাকে করি। এ ছাড়া বাকি সময় সাভারের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করি। তবে স্মৃতিসৌধে কাজ করলে আমার ডাক পড়বেই। অন্য মিস্ত্রিরা এই জায়গার কাজ করার মতো দক্ষ না। এইখানের ইটপাথরের যে কাজ, সেগুলো তো আমরাই করেছি। মাঝে মাঝে পুরোনো মানুষদের কথা মনে পড়ে, যাঁরা একসঙ্গে কাজ করেছি।’
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রোমন্থন করে কালু বলেন, ‘তখন আমার বয়স ছিল ১৪ বছর। মুক্তিযোদ্ধাদের খাবারদাবার, পানি আনা-নেওয়ার কাজ করতাম। আমার চাচা কামালউদ্দিন ছিলেন মেম্বার। তিনি মুক্তিবাহিনীকে খাবার দিতেন। এই অপরাধে আমার চাচাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল ধামরাই রেস্টহাউসে। ওইখানে আর্মিদের ক্যাম্প ছিল।’
কালু বলেন, ‘সেখানে নিয়ে চাচাকে মেরে ফেলেছে পাকিস্তানিরা। আমার দুই ভাইকেও ধরে নিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তাদের মারেনি। নদীর পাড়ে নিয়ে তাদের ছেড়ে দিয়েছিল। বিজয় দিবস আসলে যুদ্ধে যাঁদের হারিয়েছি, তাঁদের কথা বেশি মনে পড়ে।’
কালু মিয়া বলেন, ‘আগে এখানে (স্মৃতিসৌধ) ছিল জঙ্গল, এখন সবকিছু চকচকে। আমরাও ১৬ ডিসেম্বরে এখানে আসি। পুষ্পবেদিতে মালা দিই।’