সরকার, ব্যবসায়ীদের সব আশ্বাস উড়িয়ে দিয়ে রোজা শুরুর আগেই ইফতারি আর কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। সামনে এ ধারা আরও বাড়বে বলে এরই মধ্যে আশঙ্কা ছড়িয়েছে ভোক্তাদের মধ্যে। প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও রোজা ঘিরে বাজারে কিছু ব্যবসায়ীর অতিমুনাফার চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সংবাদ সম্মেলন করে রোজায় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত থাকায় দাম বাড়বে না বলে ঘোষণা দিলেও রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ আরও কয়েকটি বাজারে পণ্যের দামে উল্টোচিত্র দেখা যাচ্ছে। ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, ডাল, মাছ, মাংস, লেবু, খেজুর ও ফলের দাম উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে।
জানা যায়, এক বছরের বেশি সময় ধরে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন। সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশের কাছাকাছি। সাধারণ মানুষ বেশি দাম দিয়ে জিনিসপত্র কিনতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অজুহাতে সব পণ্যের দাম বাড়ানো হলেও বিশ্ববাজারে এখন প্রায় সব পণ্যের দামই কমছে। অথচ দেশের বাজারে কমছে না। উল্টো দফায় দফায় বাড়ছে। আর রোজা ঘিরে আরেক দফা দাম বাড়ানোর প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
রোজায় পণ্যের অস্বাভাবিক দাম নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে তৎপর থাকবেন বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি গতকাল মঙ্গলবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, গুদামে অভিযান ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বাজার সহনীয় রাখার চেষ্টা করছি। ব্যবসায়ীরাও আর দাম বাড়াবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’ দাম তো আগেই বাড়িয়ে দিয়েছেন, তার কী হবে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এখন থেকে চিনি, তেল ও ছোলার দাম আর বাড়বে না।
এদিকে, কয়েক দিন ধরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজারে সরেজমিন দেখা গেছে, অত্যাবশ্যক নিত্যপণ্যগুলোর দাম বাড়তির দিকে। কারওয়ান বাজারে বাজার-সদাই করতে আসা মকবুল আহম্মেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত এক বছরের ব্যবধানে এমন কোনো জিনিস নেই, যার দাম বাড়েনি। ৬৫-৭০ টাকার ছোলা এখন কিনতে হচ্ছে ৯০ টাকায়। মাছ, মাংসের দাম তো ধরাছোঁয়ার বাইরে। রমজান মাস শুরু হলে পণ্যের দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে বুঝতে পারছি না।’
গত সপ্তাহ থেকে বাজারে চড়ছে লেবুর দাম। মাঝারি সাইজের অপরিপক্ব লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। মাসখানেক আগেও লেবুর ডজন কিনতে পাওয়া গেছে ৭০-৮০ টাকায়। খেজুর কিনতে আসা মধ্যবয়সী বেসরকারি চাকরিজীবী আনিসুল হক বলেন, ‘দুই মাস আগে প্রতি কেজি মাবরুম খেজুর কিনেছি ৫০০ টাকা দরে। এখন দাম বেড়ে হয়েছে ৭০০ টাকা। দুই কেজি কেনার ইচ্ছা থাকলেও এখন এক কেজি কিনে ঘরে ফিরছি।’
মাসখানেক আগে জাহিদি খেজুর ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। খেজুর বিক্রেতা রুবেল হোসেন বলেন, ‘গত বছর এই জাহিদি খেজুর বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৭০-৮০ টাকা দরে।’
ছোলা ও ডালের দাম কমতির দিকে
রমজান সামনে রেখে বাড়তি আমদানি হওয়ায় বাজারে সব ধরনের ডাল ও ছোলার দাম কমতে শুরু হয়েছে। গত এক মাসের ব্যবধানে ছোলার দাম কমেছে ৮ শতাংশ এবং ডালে প্রায় ২ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা টিসিবি, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
টিসিবি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গতকাল প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮০-৯০ টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল ৯০-৯৫ টাকা। এ সময়ে দাম কমেছে ৮ দশমিক ১১ শতাংশ। ছোট মসুর ডালের দাম ছিল ১৩০-১৪০ টাকা। গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ১৩০-১৩৫ টাকা। শতকরা দাম কমেছে ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। বড় মসুর ডালের দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা, বর্তমানে তা ১১০-১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের ডাল ব্যবসায়ী বিকাশ সাহা জানান, বিপুল পরিমাণ ডালের আমদানি হওয়ায় দাম নিম্নমুখী।