রফিকুদ্দিন আহমদের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল। কনে ছিলেন তাঁরই প্রতিবেশী ও চাচাতো বোন রাহিজা খানম পানু বিবি। রফিকের বাবা ঢাকায় এসেছিলেন বিয়ের জন্য রফিককে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যেতে। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হয়নি। পরে পারিবারিক সিদ্ধান্তের ফলে রফিকের অনুজ আব্দুর রশিদের সঙ্গে রফিকের বাগদত্তা পানু বিবির বিয়ে হয়।
রফিক পড়তেন মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজে। আইকম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। একসময় পড়াশোনা শেষ না করেই ঢাকায় চলে আসেন। বাবার প্রেসে কাজ করতেন তিনি। আসল বাড়ি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার পারিল গ্রামে। মরহুম আবদুল লতিফ আর রফিজা খানমের বড় ছেলে তিনি।
রফিকুদ্দিন রমনা এলাকায় বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের সঙ্গে ছিলেন। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্র-জনতার মিছিলের একজন ছিলেন তিনি। বেলা প্রায় সোয়া ৩টার দিকে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে একটি গুলি এসে রফিকুদ্দিনের মাথায় লাগে। মাথার মগজ বেরিয়ে যায়। গুলি লাগার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি মারা যান।
মাথার খুলি উড়ে যাওয়া রফিককে মেডিকেল কলেজের ছাত্র হুমায়ুন কবির হাই, মশাররফুর রহমানেরা জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। প্রখ্যাত আলোকচিত্রী আমানুল হক আর সহপাঠী সিরাজ জিন্নাত রফিকের মৃতদেহের ছবি তোলেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সাংবাদিক-সাহিত্যিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রফিকের লাশটি দেখেন। আর তখনই তাঁর মাথায় একটি পঙ্ক্তি ভেসে বেড়াতে থাকে, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...।’ পরে তিনি কবিতাটি লিখে ফেলেন, যা একুশের গান হিসেবেই জনমনে ঠাঁই করে নিয়েছে।
ভাষাশহীদ রফিকের লাশ গোপনে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। এত দিন পর আর জানার উপায় নেই, ঠিক কোন জায়গায় রফিককে সমাহিত করা হয়েছিল। কারণ, সেই কবরটি সংরক্ষিত ছিল না। ফলে পরে আরও অনেকের কবরই সেখানে দেওয়া হয়।
একুশের প্রথম শহীদ তিনি।
সূত্র: জাহীদ রেজা নূর, ভাষাশহীদদের কথা, কিশোর আলো, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯