বাংলা চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করার শখ ছিল শচীন দেববর্মনের। সে কারণে নিউ থিয়েটার্সে ঘোরাফেরাও করেছেন। কিন্তু কেউ তাঁকে কাজ দেয়নি তখন। তিনি সেখানে খুব অপরিচিত ছিলেন না, নীতিন বসু, হেমচন্দ্র, দেবকী বসু, প্রমথেশ বড়ুয়া, পাহাড়ী সান্যালের সঙ্গে তাঁর চেনা-জানা, কিন্তু সংগীত পরিচালক হিসেবে তাঁকে কাজ দেওয়ার ব্যাপারে কেউ সাহায্য করেননি তখন। খুব অভিমান হয়েছিল শচীনকর্তার। অথচ বাংলা সিনেমায় একেবারে সুর করেননি তিনি, তেমন তো নয়। ‘রাজগী’ আর ‘রাজকুমারের নির্বাসন’ ছবি দুটোয় তো সুর দিয়েছিলেন!
এ সময় বিয়ে হলো মীরার সঙ্গে। জন্ম হলো রাহুলের। ১৯৪২ সালে চণ্ডুলাল শাহর কাছ থেকে বোম্বেতে কাজ করার আমন্ত্রণ পান। কলকাতা ছাড়তে মন সায় দেয় না। এরপর ‘ফিল্মিস্তান’ থেকে রায় বাহাদুর চুনীলাল ও শশধর মুখার্জি সিনেমায় সংগীত পরিচালনার জন্য শচীনকে আমন্ত্রণ জানান। সেটা ১৯৪৪ সাল। স্ত্রী-পুত্রসহ এবার এলেন বোম্বে।
প্রথম সংগীত পরিচালনা করলেন ‘শিকারী’ ছবিতে। এরপর ‘এইট ডেজ’, ‘দো ভাই’, ‘শবনম’, ‘পেয়িং গেস্ট’, ‘মুনীমজী’ ছবিতে সংগীত পরিচালনা করলেন। শচীন বুঝতে পারছিলেন, চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের প্রশংসা পেলেও সাধারণ মানুষের মন পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না তাঁর গান। সুর তৈরি করার সময় একদিন বেয়ারা ছেলেটির গলায় ‘রতন’ ছবির একটি গান শুনতে পেলেন। অন্যের ছবির গান কেন গাইছে ছেলেটা? ও তো শচীনের সুরের মধ্যেই বসে থাকে! চোখ খুলে গেল শচীনের। বুঝলেন, ফিল্মের হিট গান মানে অতি সোজা সুর। যত কম অলংকার, ততই ভালো, তাতে সাধারণ মানুষ নিজের গলায় তুলে নিতে পারে গানটি।
শচীন মনে করেন, চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক হিসেবে তাঁর প্রথম গুরু হচ্ছে এই স্টুডিওর রুমবয়টি। শচীন সুর করে লুকিয়ে লুকিয়ে খেয়াল করতেন, এই রুমবয় সেই সুরে সাড়া দিচ্ছে কি না। যে গানগুলো ছেলেটি গুনগুন করত, সেগুলোই হিট হয়েছে পরবর্তীকালে!
সূত্র: শচীন দেববর্মন, সরগমের নিখাদ, পৃষ্ঠা ৬২-৬৭