বিদিত লাল দাস ছিলেন বাউল ধারার গায়ক, সুরকার এবং লোকসংগীত গবেষক। সুরের মানুষ হিসেবে ভুবনজোড়া খ্যাতি পেলেও তাঁকে সিলেটবাসী ‘পটল বাবু’ নামে চিনত। তাঁর বাবা ছোটবেলায় আদর করে এই নাম রেখেছিলেন।
১৯৩৮ সালের ১৫ জুন সিলেটের এক জমিদার পরিবারে তাঁর জন্ম। মাত্র সাত বছর বয়স থেকে সংগীতের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। সেই থেকে সংগীতই তাঁর আজীবনের ধ্যান-জ্ঞানে পরিণত হয়। ১৯৪৬ সালে তিনি ভারতের আসামে চলে যান। সেখানে তাঁর শিক্ষা শুরু হয়। কিন্তু ১৯৫৯ সালে বাবার অসুস্থতার কারণে সিলেটে ফিরে আসেন। সেই থেকে সিলেটে তাঁর স্থায়ী বাস। তাঁর সংগীত শেখার গুরু ছিলেন ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদ।
১৯৭২ সালে একটি গানের দল গঠন করেন তিনি। তাঁর দল বিশ্বের অনেক দেশে গান পরিবেশন করতে গিয়েছে।
২০০৪ সালে সিলেটের শেখঘাট এলাকায় তাঁর নিজের বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘নীলম্ব লোকসংগীতালয়’ নামে একটি সংগীত বিদ্যালয়।
তাঁর আজীবন স্বপ্ন ছিল সিলেটে হাসন রাজার ওপর একটি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মরমি কবিদের নিয়ে একটি সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করার।
‘কারে দেখাব মনের দুঃখ গো’, ‘মরিলে কান্দিসনে আমার দায়’, ‘সাধের লাউ বানাইল মোরে বৈরাগী’, ‘আমি কেমন করে পত্র লিখি’, ‘ভ্রমর কইও গিয়া’, ‘বিনোদিনী গো তোর বৃন্দাবন কারে দিয়ে যাবি’—এমন বহু জনপ্রিয় গানের সুরস্রষ্টা তিনি।
তিনি হাসন রাজা, রাধারমণ দত্ত, গিয়াস উদ্দিনসহ আরও অনেক বিখ্যাত সুরকারের গানে সুর দিয়েছেন। তিনি একই সঙ্গে ‘সিরাজউদ্দৌলা’, ‘দ্বীপান্তর’, ‘তপসী’, ‘প্রদীপশিখা’, ‘বিসর্জন’ ও ‘সুরমার বাঁকে বাঁকে’ নাটকে সংগীত পরিচালনা করেছেন। সিলেট অঞ্চলের গান নিয়ে তাঁর রচিত বইয়ের নাম ‘সুরমা পারের গান’। এটি একটি সমাজ গবেষণামূলক গানের ওপর বই।
এই মরমি শিল্পী ২০১২ সালের ৮ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।